পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ ভখনো পথ ছিল জনহীন, এখনো তেমনি । চলিতে চলিতে একসময়ে আবার সেই প্রশ্নই করিলাম, তুমি কি এখান থেকে সত্যি চলে যাবে ? বার বার এ কথা জেনে তোমার কি হবে গোসাই ? এবারেও জবাব দিতে পারিলাম না, শুধু আপনাকে আপনি জিজ্ঞাসা করিলাম, সত্যিই কেন বার বার এ কথা জানতে চাই -জানিয়া আমার লাভ কি ! মঠে ফিরিয়া দেখা গেল ইতিমধ্যে সবাই জাগিয়া উঠিয় প্রাত্যহিক কাজে নিযুক্ত হইয়াছে। তখন কাসরের শব্দে ব্যস্ত হইয়া বৈষ্ণবীকে বৃথা তাড়া দিয়াছিলাম। অবগত হইলাম তাহা মঙ্গল-আরতির নয়, সে গুধু ঠাকুরদের ঘুম-ভাঙ্গানোর বাস্ত । এ র্তাদেরই সয় । দু’জনকে অনেকেই চাহিয়া দেখিল, কিন্তু কাহারও চাহনিতে কৌতুহল নাই। শুধু পদ্মার বয়স অত্যন্ত কম বলিয়া সেই কেবল একটুখানি হাসিয়া মুখ নীচু করিল। ঠাকুরদের সে মালা গাথে। ডালাটা তাহারি কাছে রাখিয়া দিয়া কমললতা সমেহ কৌতুকে তর্জন করিয়া বলিল, হাসলি ষে পোড়ামুথি ? সে কিন্তু আর মুখ তুলিল না। কমললতা ঠাকুর-ঘরে গিয়া প্রবেশ করিল, আমিও আমার ঘরে গিয়া ঢুকিলাম । স্নানাহার যথারীতি এবং যথাসময়ে সম্পন্ন হুইল। বিকালের গাড়িতে আমার বাবার কথা। বৈষ্ণবীর সন্ধান করিতে গিম্বা দেখি সে ঠাকুর-ঘরে, ঠাকুর সাজাইতেছে। আমাকে দেখিবামাত্র কহিল, নতুনগোসাই, যদি এলে আমাকে একটু সাহায্য করো না ভাই ! পদ্মা মাথা-ধরে শুয়ে আছে, লক্ষ্মী-সরস্বতী দু’বোনেই হঠাৎ জরে পড়েচে—কি ষে হবে জানিলে । এই বাসষ্ঠী-রঙের কাপড় দুখানি কুঁচিয়ে দাও না গোসাই । অতএব, ঠাকুরের কাপড় কুঁচাইতে বসিয়া গেলাম, যাওয়া ঘটিল না। পরের দিনও না এবং তার পরের দিনও না। বৈষ্ণবীর প্রত্যুষের ফুল তুলিবার সঙ্গী আমি। প্রভাতে, মধ্যাহ্নে, সায়াহ্নে একট-না-একটা কিছু কাজ আমাকে দিয়া সে করাইয়া লয়। এমনি করিয়া দিনগুলো যেন স্বপ্নে কাটে। সেবায়, সহৃদয়তায়, আনন্দে, জারাধনায়, ফুলে, গন্ধে, কীৰ্ত্তনে, পাখীর গানে কোথাও আর ফাক নাই , অৰচ সন্দিগ্ধ মন মাঝে মাঝে গঙ্গাগ হইয়া ভংসনা করিয়া উঠে, এ কি ছেলেখেলা ? বাহিরের সকল সংস্রব রুদ্ধ করিয়া গুটি-কয়েক নিজাব পুতুল লইয়া এ কি মাতামাতি ? এত বড় আত্মবঞ্চনায় মানুষ বঁাচে কি করিয়া ? কিন্তু তবু ভালো লাগে, ষাই স্বাই করিয়াও পা বাড়াইতে পারি না। এদিকটায় ম্যালেরিয়া কম, তথাপি অনেকেই ག| s