পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

酸 শ্ৰীকান্ত এই সময়টায় জরে পড়িতেছিল । গহর একটিনি মাত্র আলিয়াছিল, আর আসে নাই ; তাহারও খোজ লইবার সময় করিয়া উঠিতে পারি না—এ আমার হইয়াছে ভালো ! সহসা মনের ভিতরটা ভয় ও ধিক্কারে পূর্ণ হইয়া উঠিল--এ আমি করিতেছি কি ! সঙ্গদোষে এই সবই কি সত্য বলিয়া একদিন বিশ্বাসে দাড়াইবে নাকি ? স্থির করিলাম, আর না—যাই কেননা ঘটুক, এই জায়গা ছাড়িয়া কাল আমাকে পলাইতে হইবে । প্রত্যহ রাত্রিশেষে বৈষ্ণবী আসিয়া আমাকে জাগায়। ভোরের সুরে বৈষ্ণবকবিদের ঘুম-ভাঙানোর গান। ভক্তি ও ভালোবাসার সে কি সকরুণ আবেদন । হঠাৎ সাড়া দিই না, কান পাতিয়া গুনি । চোখের কোণে জল আসিয়া পড়িতে চায়। মশারি তুলিযা সে দোর-জানালা খুলিয়া দেয়—ব্ল'গ করিয়া উঠিয়া বসি এবং মুখস্থাত ধুইয়া কাপড় ছাড়িয়া সঙ্গে চলি । দিন-কয়েকের অভ্যাসে আপনি আজ ঘুম ভাঙ্গিল। ঘর অন্ধকার। একবার মনে হইল রাত্রি এখনো পোহা নাই, কিন্তু সন্দেহ জন্মিল। বিছানা ছাড়িয়া বাহিরে আসিলাম—দেখি রাত কোথায়, সকাল হইয়াছে। কে একজন খবর দিতে কমললত আসিয়া দাড়াইল, এমন অমাত, অপ্রস্তুত চেহারা পূৰ্ব্বে দেখি নাই। সভয়ে জিজ্ঞাসা করিলাম, তোমার অসুখ নাকি ? সে স্নান হাসিয়া কহিল, আজ তুমি জিতেচ গোঁসাই। কিসে বলো ত ? শরীরটা আজ তেমন ভালো নেই, সময়ে উঠতে পারিনি। আজ তবে ফুল তুলতে গেল কে ? উঠানের ধারে আধমরা একটা টগর গাছে সামান্ত কয়েকটা ফুল ছিল, তাহাই দেখাইয়া কহিল, এবেলা যা করেই হোক ওতেই চলে যাবে। কিন্তু ঠাকুরের গলার মালা ? মালা আজি তাদের পরাতে পারব না। শুনিয়া মন কেমন করিয়া উঠিল সেই নিৰ্জ্জীব পুতুলগুলোর জন্তেই ; বলিলাম, স্নান করে আমি তুলে এনে দিই ? তা যাও, কিন্তু এত ভোরে নাইতে পাবে না। অসুখ করবে। জিজ্ঞাসা করিলাম, বড়গোসাইজীকে দেখচিনে কেন ? বৈষ্ণবী কহিল, তিনি ত এখানে সেই, পরশু নবদ্বীপে গেছেন তার গুরুদেবকে দেধতে । কবে ফিরবেন ? সে ত জানিনে গোসাই ! ৭১