পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ এতদিন মঠে থাকিয়াও বৈরাগী দ্বারিকায়াসের সহিত ঘনিষ্ঠত হয় নাই— কতকটা আমার নিজের দোষে, কতকটা তাহার নির্লিপ্ত স্বভাবের জন্য। বৈষ্ণবীর মুখে শুনিয়া ও নিজের চোখে দেখিয়া জানিয়াছি এ লোকটির মধ্যে কপটতা নাই, অনাচার নাই, আর নাই মাস্টারি করিবার ঝোক । বৈষ্ণব ধৰ্ম্মগ্রন্থ লইয়া অধিকাংশ সময় র্তাহার নির্জন ঘরের মধ্যে কাটে। ইহার ধৰ্ম্মমতে আমার আস্থাও নাই, বিশ্বাসও নাই, কিন্তু এই মানুষটির কথাগুলি এমন নম্র, চাহিবার ভঙ্গী এমন স্বচ্ছ ও গভীর, বিশ্বাস ও নিষ্ঠায় অহৰ্নিশ এমন ভরপুর হইয়া আছেন যে, তাহার মত ও পথ লইয়া বিরুদ্ধ আলোচনা করিতে শুধু সঙ্কোচ নয়, দুঃখ বোধ হয় । আপনিই বুঝা যায় এখানে তর্ক করিতে যাওয়া একেবারে নিষ্ফল। একদিন সামান্ত একটুখানি যুক্তির অবতারণা করায় তিনি হাসিমূখে এমন নীরবে চাহিয়া রছিলেন যে, কুষ্ঠায় আমার মুখেও আর কথা রহিল না । তারপর হইতে তাহাকে সাধ্যমত এড়াইয়া চলিয়াছি, তবে একটা কৌতুহল ছিল। এতগুলি নারী-পরিবৃত থাকিয়া নিরবচ্ছিন্ন রসের অঙ্কুশীলনে নিমগ্ন রহিয়াও চিত্তের শাস্তি ও দেহের নিৰ্ম্মলতা অক্ষুন্ন রাখিয়া চলার রহস্ত, ইচ্ছা ছিল যাইবার পূৰ্ব্বে তাহাকে জিজ্ঞাসা করিয়া যাইব। কিন্তু সে সুযোগ এযাত্রা বোধ করি আর মিলিল না । মনে মনে বলিলাম, আবার যদি কখনো আসা হয় ত তখন দেখা যাইবে । বৈষ্ণবের মঠেও বিগ্রহপূৰ্ত্তি সচরাচর ব্রাহ্মণ ব্যতীত অন্তে স্পর্শে করিতে পারে না, কিন্তু এ আশ্রমে সে বিধি ছিল না। ঠাকুরের বৈষ্ণব পূজারী একজন বাহিরে থাকে, সে আসিয়া যথারীতি আজও পূজা করিয়া গেল, কিন্তু ঠাকুরের সেবার ভার আজ অনেকখানি জাসিয়া পড়িল আমার পরে । বৈষ্ণবী দেখাইয়া দেয়, আমি করি সব, কিন্তু রহিয়া রহিয়া সমস্ত অস্তর তিক্ত হইয়া উঠে। এ কি পাগলামি আমাকে পাইয়া বসিতেছে তথাপি আজও যাওয়া বন্ধ রহিল । আপনাকে বোধ হয়, এই বলিয়া বুঝাইলাম যে, এতদিন এখানে আছি, এ বিপদে ইহাঙ্গের ফেলিয়া যাইব কিরূপে । সংসারে কৃতজ্ঞতা বলিয়াও ত একটা कथ! अप्टिङ् । জারও দুইদিন কাটিল। কিন্তু আর না । কমললতা সুস্থ হইয়াছে, পদ্মা ও লক্ষ্মীসরস্বতী দুই বোনেই সারিয়া উঠিয়াছে। দ্বারিকাদাস গত সন্ধ্যায় ফিরিয়াছেন, তাহার কাছে বিদায় লইতে গেলাম । গোসাইঙ্গী কহিলেন, জাঙ্গ যাবে গোসাই ? আবার কবে আসবে ? সে ও জানিনে গোসাই । १३