পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ ঐ যে কমললতা । কিন্তু সে জানবে কি করে নবীন ? সে জানে না ? সব জানে । আর বিতর্ক না করিয়া উত্তেজিত নবীনকে মঠের বাহিরে লইয়া আসিলাম, বলিলাম, সত্যই কমললতা কিছুই জানে না নবীন। নিজে অমুখে পড়ে তিন-চার দিন আখড়ার বাইরেও যায়নি। নবীন বিশ্বাস করিল না। রাগ করিয়া বলিল, জানে না ? ও সব জানে। বোষ্টমী কি মস্তর জানে—ও পারে না কি ? কিন্তু পড়ত একবার নবনের পাল্লায়, ওর চোখমুখ ঘুরিয়ে কেত্তন করা বার করে দিতুম । বাপের অতগুলো টাকা ছোড়া ভেলকিতে উড়িয়ে দিলে ! তাহাকে শাস্ত করার জন্ত কহিলাম, কমললতা টাকা নিয়ে কি করবে নবীন ? বোষ্টম মাহুষ, মঠে থাকে, গান গেয়ে দুটো ভিক্ষে করে ঠাকুর-দেবতাদের সেবা করে, ছ’বেলা দু’মুঠো খাওয়া বৈ ত নয়—ওকে টাকার কাঙাল বলে ত আমার বোধ হয় না নবীন । নবীন কতকটা ঠাগু হইয়া বসিল, ওর নিজের জন্তে নয় তা আমরাও জানি । দেখলে যেন ভদরঘরের মেয়ে বলে মনে হয় । তেমনি চেহারা, তেমনি কথাবাৰ্ত্ত । বড়বাবাজীটাও লোভী নয়, কিন্তু একপাল পুস্তি রয়েছে যে । ঠাকুরসেবার নাম করে তাদের যে লুচি-মণ্ড ঘি-দুধ নিত্যি চাই। নয়ন চকোভির মুখে কানায়ুৰ্যোয় গুনচি আখড়ার নামে বিশ বিধে জমি নাকি খরিদ হয়ে গেছে। কিছুই থাকবে না বাবু, যা আছে সব বৈরাগীদের পেটে গিয়েই একদিন ঢুকবে। বলিলাম, হয়ত গুজব সত্যি নয় । কিন্তু সে-পক্ষে তোমাদের নয়ন চক্কোত্তিও ত কম নয় নবীন । নবীন সহজেই স্বীকার করিয়া কহিল, সে ঠিক। বিটুলে বামুন মস্ত ধড়িবাজ । কিন্তু বিশ্বেস না করি কি করে বলুন । সেদিন খামোক আমার ছেলেদের নামে দশ বিষে জমি দানপত্তর করে দিলে। অনেক মানা করলুম, শুনলে না। বাপ বহুত রেখে গেছে মানি, কিন্তু বিলোলে ক’দিন বাৰু ? একদিন বললে কি জানেন ? বললে, আমরা ফকিরের বংশ, ফকিরি আমার ত কেউ ঠকিয়ে নিতে পারবে না ? গুমুন কথা ! নবীন চলিয়া গেল। একটা বিষয় লক্ষ্য করিলাম, আমি কিসের জন্য যে এতদিন মঠে পড়িয়া অাছি এ কথা সে জিজ্ঞাসাও করিল না। জিজ্ঞাসা করিলেই যে কি বলিতাম জানি না, কিন্তু মনে মনে লজ্জা পাইতাম । তাহার কাছেই আরও একটা খবর পাইলাম, কাল কালিদাসবাবুর ছেলের ঘটা করিয়া বিবাহ হইয়া গিয়াছে। সাতাশে তারিখটা আমার খেয়াল ছিল না । 40