পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীকাত্ত ভূটবেই। চলিতে চলিতে হঠাৎ একসময়ে মনে হইল সৰ পথগুলাই যেন চেনা। যেন কতদিন এপষে কতবার আনাগোনা করিয়াছি। শুধু আগে ছিল বড় ; এখন কি করিয়া যেন সঙ্কীর্ণ এবং ছোট্ট হইয়া গিয়াছে ; কিন্তু ঐ না থাম্বেদের গলায়দড়ির বাগান । তাই ত বটে। এ যে আমাদের গ্রামের দক্ষিণপাড়ার শেষপ্রাপ্ত দিয়া চলিয়াছি। কে নাকি কবে শূলের ব্যাথায় ঐ তেঁতুল গাছের উপরের ডালে গলায় দড়ি দিয়া আত্মহত্যা করিয়াছিল। করিয়াছিল কিনা জানি না, কিন্তু প্রায় সকল গ্রামের মত এখানেও একটা জনশ্রুতি আছে। গাছটা পথের ধারে, ছেলেবেলায় চোখে পড়িলে গায়ে কাটা দিয়া উঠিত এবং চোখ বুজিয়া সবাই এক দৌড়ে স্থানটা পার হইয়া যাইতাম । গাছটা তেমনই আছে । তখন মনে হইত ঐ অপরাধী গাছটার গুড়িটা যেন পাহাড়ের মত, মাথা গিয়া ঠেকিয়াছে আকাশে । আজ দেখিলাম সে বেচারার গৰ্ব্ব করিবার কিছু নাই, আরও পাচটা তেঁতুলগাছ যেমন হয় সেও তেমনি। জনহীন পল্লীপ্রাস্তে একাকী নিঃশব্দে দাড়াইয়া আছে । শৈশবে একদিন যাহাকে সে যথেষ্ট ভয় দেখাইয়াছে, আজ বহু বর্ষ পরে প্রথম সাক্ষাতে তাহাকেই সে যেন বন্ধুর মত চোখ টিপিয়া একটুখানি রহস্ত করিল—কি ভাই বন্ধু, কেমন আছ ? ভয় করে না ত ? কাছে গিয়া পরমস্নেহে একবার তাহার গায়ে হাত বুলাইয়া লইলাম, মনে মনে বলিলাম, ভালো আছি ভাই । ভয় করবে কেন, তুমি যে আমার ছেলেবেলার প্রতিবেশী, আমার আত্মীয় । সায়াহ্নের অালো নিবিয়া আসিতেছিল, বিদায় লইয়া বলিলাম, ভাগ্য ভালো ষে দৈবাৎ দেখা গেল । - সারি সারি অনেকগুলা বাগানের পরে একটুখানি খোলা জায়গা, অন্তমনে হয়ত এটুকু পার হইয়া আসিতাম, কিন্তু সহসা বহুদিনের বিস্মৃতপ্রায় পরিচিত ভারি একটি মিষ্ট গদ্ধে চমক লাগিল—এদিক-ওদিক চাহিতেই চোখে পড়িয়া গেল—বা: ! এ যে আমাদের সেই যশোদা বৈষ্ণবীর আউশফুলের গন্ধ ! ছেলেবেলায় ইহার জন্ত ধশোদার কত উমেদারিই না করিয়াছি । এ-জাতীয় গাছ এদিকে মিলে না, কি জানি সে কোৰ হইতে আনিয়া তাহার আঙ্গিনার একধারে পুতিয়াছিল। ট্যারা-বাৰু৷ গাটে-ভরা বুড়ো মানুষের মত তাহার চেহারা—সেদিনের মত আজও তাহার সেই একটিমাত্র সঙ্গীৰ শাখা এবং উৰ্দ্ধে গুটিকয়েক সবুজ পাতার মধ্যে তেমনি গুটিকয়েক সাল সাদা ফুল। ইহার নীচে ছিল যশোদার স্বামীর সমাধি। বোষ্টমঠাকুরকে আমরা দেখি নাই, আমাদের জন্মের পূর্কেই তিনি গোলোকে রওনা হইয়াছিলেন। তাহারই ག ༢༽