পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঐীকান্ত র্তার নামটি কি ? কমললতা । কেউ কেউ রাগ করে কমলিলতাও বলে। বলে, ও স্বাঞ্ছ জানে বলে, ওর কীৰ্ত্তনগানে মানুষ পাগল হয়। সে যা চায় তাই দেয় । তুমি শুনেচ ? গুনেচি । চমৎকার । ওর বয়েস কত ? বোধ হয় তোমার মতই হবে । একটু বেশী হতেও পারে। দেখতে কেমন ? ভালো । অন্তত: মন্দ বলা চলে না। নাক-যাদ উদ্ধিপরা যাদের তুমি দেখেচ তাদের দলের নয় । এ ভদ্রঘরের মেয়ে । রাজলক্ষ্মী কহিল, সে আমি ওর কথা শুনেই বুঝেচি। যে ক'দিন ছিলে তোমাকে যত্ন করত ত ? বলিলাম, হা । আমার কোন নালিশ নেই । রাজলক্ষ্মী হঠাৎ একটা নিশ্বাস ফেলিয়া বলিয়া উঠিল, তা করুক। যে সাধ্যি-সাধনায় তোমাকে পেতে হয় তাতে ভগবান মেলে । সে বোষ্টম-বৈরাগীর কাজ নয়। আমি ভয় করতে যাব কোথাকার কে এক কমললতাকে ? ছি ! এই বলিয়া সে উঠিয়া বাহিরে চলিয়া গেল । আমার মুখ দিয়াও একটা বড় নিশ্বাস পড়িল । বোধ হয় একটু বিমনা হইয়া পড়িয়াছিলাম, এই শবে ইস হুইল ! মোট তাকিয়াটা টানিয়া লইয়া চিত হইয়া তামাক টানিতে লাগিলাম। উপরে কোথায় একটা ছোট মাকড়সা ঘুরিয়া ঘূরিয়া জাল বুনিতেছিল, উজ্জ্বল গ্যাসের আলোয় ছায়াটা তার মন্তবড় বীভৎস জন্তুর মত কড়িকাঠের গায়ে দেখাইতে লাগিল । আলোকের ব্যবধানে ছায়াটাও কত গুণেই না কায়াটাকে অতিক্রম করিয়া যায় । রাজলক্ষ্মী ফিরিয়া আসিয়া আমারই বালিশের এককোণে কচুয়ের ভর দিয়া ঝু কিয়া বসিল । হাত দিয়া দেখিলাম তাহার কপালের চুলগুলা ভিজা । বোধ হয় এইমাত্র চোখেমুখে জল দিয়া আসিল । প্রশ্ন করিলাম, লক্ষ্মী, হঠাৎ এরকম কলকাতায় চলে এলে যে ? রাজলক্ষ্মী বলিল, হঠাৎ মোটেই নয়। সেদিন থেকে দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টাই এমন মন কেমন করতে লাগল যে কিছুতেই টকতে পারলুম না, ভয় হ’লো বুঝি হার্টফেল করবো—এজন্মে আর চোখে দেখতে পাব না, এই বলিয়া সে গুড়গুড়ির নলটা আমার মুখ হইতে সরাইয়া দূরে ফেলিয়া লি, বলিল, একটু থামে। ধুয়োর জালায় যুদ্ধ পৰ্য্যস্ত দেখতে পাইনে এমনি অন্ধকার করে তুলেচে । b”ፃ