পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ত্রয়োদশ সম্ভার).djvu/১১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পথের দাবী অত্যন্ত বিশ্রী লাগিতেছিল, আপনাকে সে অ্যর সংবরণ করিতে পারিল না, জলিয়া উঠিয়া কহিল, কেন ছলনা করচেন ডাক্তারবাবু, স্থমিত্রাকে প্রেসিডেন্ট করুন, আর যাকেই যা করুন, দল আপনার এবং আপনিই এর সব, তাতে লেশমাত্র সন্দেহ নেই। পুলিশের চোখে ধূলো দিতে পারবেন, কিন্তু আমার চোখকে ফাকি দিতে পারবেন না, এ আপনি নিশ্চয় জানবেন । তাহার কথা শুনিয়া একবার এই শীর্ণদেহ বৃহস্তপ্রিয় লোকটি অকৃত্রিম বিস্ময়ে দুই চক্ষু বিস্ফারিত করিয়া তাহার মুখের প্রতি চাহিয়া কহিলেন, আমার দল মানে এ্যানার্কিস্টের দল ত? আপনি মিথ্যে শঙ্কিত হয়ে উঠেচেন অপূৰ্ব্ববাবু, আপনার আগাগোড়া ভুল হয়েচে । তাদের হ’ল জীবন-মৃত্যুর খেলা, তারা আপনার মত ভীতু লোককে দলে নেবে কেন ? তারা কি পাগল ? অপূৰ্ব্ব লজ্জায় এতটুকু হইয়া গেল, কিন্তু তাহার বুকের উপর হইতে গুরুভার পাষাণ নামিয়া গেল । ar ডাক্তার কহিলেন, পথের দাবী নাম দিয়ে মুমিত্রা এই ছোট্ট দলটির প্রতিষ্ঠা করেচেন। জীবন-যাত্রায় মামুষের পথ চলবার অধিকার যে কত বড় এবং কত পবিত্র এই মস্ত সত্যটাই মাচুধে যেন ভুলে গেছে । আপনার অর্থাং দলের সভ্য যারা, র্তারা নিজেদের সমস্ত জীবন দিয়ে এই কথাটাই মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিতে চান । স্বমিত্রা অমুরোধ করলেন আমি যে কয়দিন এখানে আছি তার দলটিকে যেন গড়ে দিয়ে যাই । আমি রাজি হয়েচি—এ ছাড়া আপনাদের সঙ্গে আমার কোন সম্বন্ধ নেই। আপনারা হলেন সমাজ-সংস্কারক, কিন্তু আমার সমাজ-সংস্কার করে বেড়াবার সময়ও নেই, ধৈর্য্যও নেই। হয়ত কিছুদিন আছি, হয়ত কালই চলে যেতে পারি ; সারাজীবনে কখনো দেখাও না হতে পারে। বেঁচে আছি কি নেষ্ট, এটুকু খবর ও হয়ত আপনাদের কানে পৌছবে না। কথাগুলি শাস্ত ধীর-উচ্ছ্বাস বা আবেগের বাষ্পও নাই। এই ব্যক্তি যেই হৌক, কিন্তু সব্যসাচীর যে বিবরণ অপূৰ্ব্ব কাকাবাবুর মুখে শুনিয়াছে, সেইসব দপ, করিয়া মনে পড়িয়া তাহার বুকের কোথায় যেন খোচার মত বিধিল । কিন্তু তখনি মনে হইল, সে ত পাষাণ,—তাহার জন্য আবার বেদনাবোধ কি ? ক্ষণকাল পরে জিজ্ঞাসা করিল, ডাক্তারবাৰু, মুমিত্রা কে ? আপনি তাকে জানলেন কি করে ? প্রত্যুত্তরে ভাক্তার শুধু একটুখানি হালিলেন । উত্তর না পাইয়া অপূৰ্ব্ব নিজেই যুঝিল এরূপ কৌতুহল সঙ্গত হয় নাই। এই অল্পকালের মধ্যেই সে এই রহস্যময় বিচিত্র সমাজের আচরণের বিশিষ্টতা লক্ষ্য করিতেছিল, তাই, সে ভারতীয় সম্বন্ধেও তাহার প্রবল কৌতূহলও সংবরণ করিয়া মৌন হইয়া রহিল। Sea