পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ত্রয়োদশ সম্ভার).djvu/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ মিনিট পাঁচ-ছয় এইভাবে নিঃশব্দে কাটিলে ডাক্তার প্রথমে কথা কহিলেন, বলিলেন, আপনার কল্যাণেই বোধ হয় রাস্ত আজ একেবারে নিরাপদ। এমন প্রায় ঘটে না, কিন্তু কি ভাবচেন বলুন ত ? অপূর্ব বলিল, ভাবচি অনেক কিছু, কিন্তু সে যাক। আচ্ছ আপনি বললেন মানুষের নির্বিঘ্নে পথ চলবার অধিকার । এই যেমন আমরা আজ নির্বিঘ্নে পথ চলছি,—এমনি ? ডাক্তার সহাস্তে কহিলেন, এমনিই কিছু একটা হবে বোধ হয় । অপূৰ্ব কহিল, ওই যে মেয়েটি, স্বামী পরিত্যাগ করে পথের দাবীর সভ্য হতে এলেচেন ওটাও ঠিক বুঝলাম না! ডাক্তার কহিলেন, আমিও যে ঠিক বুঝেচি তা বলতে পারিনে। ওসব ব্যাপার স্বমিত্রাই বোঝেন ভাল । অপূর্ব প্রশ্ন করিল, তার বোধহয় স্বামী নেই ? ডাক্তার চুপ করিয়া রহিলেন। অপূৰ্বকে লজ্জা ও ক্ষোভের সহিত পুনরায় স্মরণ করিতে হইল তাহার অহেতুক ঔংস্থক্যের তিনি জবাব দিবেন না। বরং এই কথা অলক্ষ্যে যাচাই করিতে সে সঙ্গীর মুখের দিকে কটাক্ষে চাহিয়া কিন্তু একেবারে বিস্মিত হইয়া গেল। তাহার মনে হইল, এই আশ্চৰ্য্য মানুষটির অপরিজ্ঞাত জীবনের একটা নিভৃত দিক যেন সে হঠাৎ দেখিতে পাইল । সে ঠিক কি তাহা বলা কঠিন, কিন্তু এখন পর্য্যন্ত যাহা কিছু সে জানিয়াছে তাহার অতীত। যেন কোন বহুদূৰ্বাঞ্চলে তাহার চিন্তা সরিয়া গেছে, কাছাকাছি কোথাও আর নাই। অনতিদূরবর্তী ল্যাম্পপোস্ট হইতে কিছুক্ষণ হইতেই একটা ক্ষীণ আলোক ইহার মুখের উপরে পড়িয়াছিল, পাশ দিয়া যাইবার সময় অপূৰ্ব্ব স্পষ্ট দেখিতে পাইল, এই ভয়ঙ্কর সতর্ক লোকটির চোখের উপরে একটা ঝাপসা জাগ ভাসিয়া বেড়াইতেছে—এই মুহুর্তের জন্য যেন তিনি সমস্ত ভুলিয়া মনে মনে কি একটা খুজিয়া বেড়াইতেছেন। অপূৰ্ব্ব দ্বিতীয় প্রশ্ন করে নাই, নীরবে পথ চলিতেছিল, কিন্তু মিনিট দুয়ের বেশী হইবে না, অকস্মাৎ অকারণেই হাসিয়া উঠিয়া ডাক্তার বলিলেন, দেখুন অপূর্ববাবু, আপনাকে আমি সত্যই বলচি মেয়েদের এই সব প্রণয়-ঘটিত মান-অভিমানের ব্যাপার আমি কিছুই বুঝিনে। বোঝবার চেষ্টা করতে গেলেও নিরর্থক ভারী সময় নষ্ট হয়। কোথায় পাই এত সময় ? অপূৰ্বর প্রশ্নের ইহা উত্তর নয়, সে চুপ করিয়া রহিল। ভাক্তার কছিলেন, ভারী মুক্ষিল, এদের বাদ দিয়ে কাজও চলে না, নিলেও গণ্ডগোল বাধে। এ মন্তব্যও অসম্বন্ধ। অপূৰ্ব্ব নিরুত্তরেই রহিল। : } e^*