পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ত্রয়োদশ সম্ভার).djvu/১২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰন্থ আর কোথাও পাবেন না অপূৰ্ব্ববাবু একটুখানি থামিয়া কহিলেন, আপনাকে ত আমি পূৰ্ব্বেই বলেচি, মেয়েদের ব্যাপার আমি বুঝতে পারিনে ; কিন্তু স্বমিত্র যখন বলেন, জীবন-যাত্রায় মানবের পথ চলবার বাধাবন্ধহীন স্বাধীন অধিকার, তখন এ দাবীকে ত কোন যুক্তি নিয়েই ঠেকিয়ে রাখতে পারিনে। শুধু ত মনোহরের নয়, বন্ধ লোকের নির্দিষ্ট পথে চলায় নবতারার জীবনটা নির্বিয় হতে, এ আমি বুঝি এবং যে পথটা সে নিজে বেছে নিলে সে পথটাও নিরাপদ নয়, কিন্তু নিজে বিপদের মাঝখানে ডুবে থেকে আমিই বা তাকে বিচার করব কি দিয়ে বলুন ? স্বমিত্রা বলেন, এ জীবনটা নির্বিঘ্নে কাটাতে পারাটাই কি মানুষের চরম কল্যাণ ? মানুষের চিস্তা এবং প্রবৃত্তিই তার কৰ্ম্মকে নিয়মিত করে, কিন্তু পরের নির্ধারিত চিন্তা ও প্রবৃত্তিকে দিয়ে সে যখন তার নিজের স্বাধীন চিন্তার মুখ চেপে ধরে তখন তার চেয়ে বড় আত্মহত্যা মানুষের ত আর হতেই পারে না। এ কথার ত কোন জবাব আমি খুঁজে পাইনে অপূৰ্ব্ববাবু। অপূর্ব বলিল, কিন্তু সবাই যদি নিজের চিন্তার মত— ডাক্তার বাধা দিয়া কহিলেন, অর্থাৎ সবাই যদি নিজের খেয়াল মত কাজ করতে চায় ?—বলিয়াই একটু মুচকিয়া হাসিয়া কহিলেন, তাহলে কি কাণ্ড হয় আপনি স্বমিত্রাকে একবার জিজ্ঞাসা করবেন। অপূৰ্ব্ব তাহার প্রশ্নের ভুলটা বুঝিতে পারিয়া সলঙ্গে সংশোধন করিতে যাইতেছিল, কিন্তু সময় হইল না । ভাক্তার পুনশ্চ বাধা দিয়া কহিলেন, কিন্তু তর্ক আর চলবে না অপূৰ্ব্ববাবু, আমরা এসে পড়েচি। আর একদিন না হয় এ আলোচনা শেষ করা যাবে } - অপূৰ্ব্ব স্বমুখে চাহিয়া দেখিল, সেই লাল রঙের বিদ্যালয় গৃহ, এবং তাহার দ্বিতলে ভারতীর ঘর হইতে তখনও আলো দেখা যাইতেছে। ডাক্তার ডাকিলেন, ভারতী ! ভারত জানালায় মুখ বাহির করিয়া ব্যগ্রস্বরে কহিল, বিজয়ের সঙ্গে আপনার দেখা হয়েছে ডাক্তারবাৰু? আপনাকে সে ডাকতে গিয়েচে । ডাক্তার হাসিয়া বলিলেন, তোমাদের প্রেসিডেন্টের আদেশ ত ? কিন্তু কোন ৷ হুকুমই এত রাত্রে ও-পথে কাউকে পাঠাতে পারবে না । কিন্তু কাকে ফিরিয়ে এনেচি দেখেচ ? ভারতী ঠাওর করিয়া দেখিয়া অন্ধকারেও চিনিতে পারিল । কহিল, ভাল করেননি। আপনি কিন্তু শীঘ্র যান, নরহরি মদ খেয়ে তার হৈমর মাথায় কুডুল মেরেচে, বাচে কিনা সন্দেহ। ক্ষমিত্রাদিদি সেখানেই গেছেন । }} •