পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ত্রয়োদশ সম্ভার).djvu/১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ কহিল, তাহদের কলেজের প্রন্সিপ্যাল সাহেবষ্ট ইহা যোগাড় করিয়া দিয়াছেন ! বোখা কোম্পানি বর্ধার রেজুন শহরে একটা নূতন অফিস খুলিয়াছে, তাহারা বিশ্বান, বুদ্ধিমান ও সচ্চরিত্র কোন বাঙালী যুবককে সমস্ত কর্তৃত্ব-ভার দিয়া পাঠাইতে চায়। বাসা-ভাড়া ছাড়া মাহিনা আপাততঃ চারিশত টাকা, এবং চেষ্টা করিয়াও কোম্পানীকে যদি লাল-বাতি জালাইতে না পারা যায় ত ছয় মাস পরে আরও দুইশত । এই বলিয়া সে হাসিতে লাগিল । কিন্তু বৰ্মা মুল্লুকের নাম শুনিয়া মায়ের মুখ মলিন হইয়া গেল, তিনি নিরুৎস্থককণ্ঠে কহিলেন, তুই কি ক্ষেপেচিস অপু, সে-দেশে কি মাহৰ যায়! যেখানে জাত, জন্ম, আচার-বিচার কিছুই নেই শুনেচি, সেখানে তোকে দেব আমি পাঠিয়ে ? এমন টাকায় আমার কাজ নেই। জননীর বিরুদ্ধতায় অপূর্ব ভীত হইয়া কহিল, তোমার কাজ নেই, কিন্তু আমার ত অাছে মা । তবে তোমার হকুমে আমি ভিখিরি হয়ে থাকতে পারি, কিন্তু সারাজীবনে কি এমন স্থযোগ আর জুটবে? তোমার ছেলের মত বিয়ে-বুদ্ধি আজকাল শহরের ঘরে ঘরে আছে, অতএব বোথা কোম্পানীর আটকাবে না, কিন্তু প্রিন্সিপ্যাল সাহেব যে আমার হয়ে একেবারে কথা দিয়ে দিয়েচেন, তার লজ্জার অবধি থাকবে না । তা ছাড়া বাড়ির সত্যকার অবস্থাও ত তোমার অজানা नग्न भी ! মা বলিলেন, কিন্তু সেটা যে শুনেছি একেবারে মেচ্ছ দেশ ! অপূৰ্ব্ব কহিল, কে তোমাকে বাড়িয়ে বলেচে। কিন্তু এটা ত তোমার মেচ্ছ দেশ নয়, অথচ যারা হতে চায় তাদের ত বাধে না মা । মা ক্ষণকাল স্থির থাকিয়া কহিলেন, কিন্তু এই বৈশাখে যে তোর বিয়ে দেব আমি স্থির করেচি । অপূৰ্ব্ব কহিল, একেবারে স্থির করে বসে আছ মা ? বেশ ত, দু-একমাস পেছিয়ে দিয়ে যেদিন তুমি ডেকে পাঠাবে সেই দিনই ফিরে এসে তোমার আজ্ঞা পালন করব। করুণাময়ী বাহিরের চক্ষে সেকেলে হইলেও অতিশয় বুদ্ধিমতী । তিনি অনেকক্ষণ নীরবে চিন্তা করিয়া অবশেবে ধীরে ধীরে কহিলেন, যখন যেতেই হবে তখন আর উপায় কি । কিন্তু তোমার দাদাদের মত নিয়ো । এই বৰ্খাযাত্রা সম্পর্কে তাহার আর দুটি সস্তানের উল্লেখ করিতে করুণাময়ীর অতীত ও বর্তমানের সমস্ত প্রচ্ছন্ন বেদনা যেন এককালে আলোড়িত হইয়া উঠিল ; কিন্তু সে দুঃখ আর তিনি প্রকাশ পাইতে দিলেন না। তাহার পিতৃকূল গোকুলদীঘির স্ববিখ্যাত বন্দ্যোপাধ্যায় বংশ এবং বংশ-পরম্পরায় তাহারা অতিশয় আচার