পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ত্রয়োদশ সম্ভার).djvu/১৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ শুনিয়ে দিই। ভারতী মুখ ফিরাইয়া চাছিল, স্থমিত্রা বিস্থিত তীক্ষ দৃষ্টি মেলিয়া স্থির হঃয় রচিল এবং এই দুইটি নারীর উন্নদ্ধ চোখের সম্মুখে লজ্জিত, অভিভূত, বাক্যহীন অপূৰ্ব্ব স্তব্ধ নতমুখে জড়বস্তুর মত বসিয়া পড়িল । রামদাস ফিরিয়া দাড়াইল, এবং তাহার দক্ষিণে বামে ও সম্মুখের বিক্ষুব্ধ, ভীত, চঞ্চল জনসমষ্টিকে সম্বোধন করিয়া উচ্চকণ্ঠে বলিতে লাগিল, ভাইসব ! আমার অনেক কথা বলবার ছিল, কিন্তু এরা গায়ের জোরে আমাদের মুখ বন্ধ করচে। এই বলিয়া সে আঙ্গুল দিয়া সুখের পুলিশ-সওয়ারগণকে দেখাইয়া বলিল, এই ডালকুত্তাদের যারা আমাদের বিরুদ্ধে, তোমাদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে, তারা তোমাদেরই কারখানার মালিকেরা! তারা কিছুতেই চায় না যে কেউ তোমাদের দুঃখ-দুৰ্দ্দশার কথা তোমাদের জানায় । তোমরা তাদের কল চালাবার, বোঝা বইবার জানোয়ার ! অথচ তোমরাও ত তাদেরি মত মানুষ, তেমনি পেট ভরে খাবার, তেমনি প্রাণ খুলে আনন্দ করবার জন্মগত অধিকার তোমরাও যে ভগবানের কাছ থেকে পেয়েচ এই সত্যটাই এরা সকল শক্তি, সকল শঠতা দিয়ে তোমাদের কাছ থেকে গোপন রাখতে চায়। শুধু একবার যদি তোমাদের ঘুম ভাঙে, কেবল একটি৭ার মাত্র যদি এই সত্য কথাটা বুঝতে পার যে, তোমরাও মানুষ, তোমরা যত দুঃখী, যত দরিদ্র, যত অশিক্ষিতই হও তবুও মামুধ, তোমাদের মামুষের দাবী কোন ওজুহাতে কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারে না, তা হলে, এই গোটা-কতক কারখানার মালিক তোমাদের কাছে কতটুকু ? এই সত্য তোমরা কি বুঝবে না ? এ যে কেবল ধনীর বিরুদ্ধে দরিদ্রের আত্মরক্ষার লড়াই ! এতে দেশ নেই, জাত নেই, ধৰ্ম্ম নেই, মতবাদ নেই—হিন্দু নেই, মুসলমান নেই,—জৈন, শিখ, কোন কিছুই নেই,—আছে শুধু ধনেীন্মত্ত মালিক, আর তার অশেষ প্রবঞ্চিত অভুক্ত শ্রমিক। তোমাদের গায়ের জোরকে তারা ভয় করে, তোমাদের শিক্ষার শক্তিকে তারা অত্যন্ত সংশয়ের চোখে দেখে, তোমাদের জ্ঞানের আকাঙ্খায় তাদের বুক্ত শুকিয়ে যায় । অক্ষম দুৰ্ব্বল, মুখ, দুর্নীতিপরায়ণ তোমরাই যে তাদের বিলাস-বাসনের একমাত্র পাদপীঠ ! তাই, মাত্র তোমাদের জীবনধারণটুকুর বেশি তিলাৰ্দ্ধ যে তার স্বেচ্ছায় কোনদিন দেবে না। এই সত্য হৃদয়ঙ্গম করা কি তোমাদের এতই কঠিন! আর সেই কথা মুক্তকণ্ঠে ব্যক্ত করার অপরাধেই কি আজ এই গোরাগুলোর কাছে আমাদের লাঞ্ছনাই সার হবে ! দরিত্রের এই বঁচবার লড়াইয়ে তোমরা কি সকল শক্তি দিয়ে যোগ দিতে পারবে না ? সর্দার-গোরা এদেশে যেটুকু হিন্দি-ভাষায় জ্ঞানলাভ করিয়াছিল তাহাতে বক্তৃতার মৰ্ম্ম প্রায় কিছুই বুঝিল না, কিন্তু সমবেত শ্রোতৃবর্গের মুখে চোখে উত্তেজনার চিহ্ন } & a