পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ত্রয়োদশ সম্ভার).djvu/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পথের দাবী কহিল, না কোন দোষ নেই। তেওয়ারীকে কহিল, বাজারের ফল, এ নিতে আর দোষ কি ঠাকুর ? - তেওয়ারী ঠাকুর খুশী হইল না, কহিল, বাজারের ফল ত বাজার থেকে আনলেই চলবে । আজ রাত্রে আমাদের দরকারও নেই, আর মা আমাকে এ-সব করতে বার 'বার নিষেধ করেচেন। মেমসাহেব, এসব তুমি নিয়ে যাও,—আমাদের চাইনে। মা যে নিষেধ করিয়াছেন, বা করিতে পারেন ইহাতে অসম্ভব কিছু নাই, এবং বহুদিনের পুরাতন ও বিশ্বাসী তেওয়ারী ঠাকুরকে যে এ সকল ব্যাপারে প্রবাসে তাহার অভিভাবক নিযুক্ত করিয়া দিতেও পারেন তাহাও সম্ভব । এই সেদিন সে জননীর কাছে কি প্রতিশ্রুতি দিয়া আসিয়াছে তাহা স্মরণ করিয়া মনে মনে কহিল, শুধু ত কেবল মাতৃআজ্ঞ নয়, আমি সত্য দিয়া আসিয়াছি । কিন্তু তথাপি, ওই সঙ্কুচিত, লজ্জিত, অপরিচিত মেয়েটি—যে তাহাকে প্রসন্ন করিতে ভয়ে ভয়ে তাহার দ্বারে আসিয়াছে— তার উপহারের সামান্ত দ্রব্যগুলিকে অস্পৃঙ্গ বলিয়া অপমান করাকেও তাহার সত্য বলিয়া মনে হইল না। কিন্তু এ কথা সে মুখ ফুটিয়া বলিতে পারিল না, মৌন হইয়া রহিল। তেওয়ারী বলিল, ও সব আমরা ছোব না মেমসাহেব, তুমি তুলে নিয়ে যাও, আমি জায়গাটা ধুয়ে ফেলি। মেয়েটি চুপ করিয়া কিছুক্ষণ দাড়াইয়া পাকিয়া হাত বাড়াইয়া ডালাটি তুলিয়া লইয়া ধীরে ধীরে প্রস্থান করিল। অপূৰ্ব্ব চাপা কক্ষস্বরে কহিল, না হয় না-ই খেতিস, নিয়ে চুপি চুপি ফেলে দিতেও ত পারতিস্ ! তেওয়ারী আশ্চৰ্য্য হইয়া বলিল, নিয়ে ফেলে দেব ? মিছামিছি নষ্ট করে লাভ কি বাবু! লাভ কি বাৰু! মুখু, গোয়ার কোথাকার! এই বলিয়া অপূৰ্ব্ব শুইতে চলিয়া গেল। বিছানায় গুইয়া প্রথমটা তাহার তেওয়ারীর প্রতি ক্রোধে সৰ্ব্বাঙ্গ জলিতে লাগিল, কিন্তু যতই সে ব্যাপারটা তন্ন তন্ন করিয়া আলোচনা করিতে লাগিল ততই মনে হইতে লাগিল, এ আমি পারিতাম না, কিন্তু হয়ত এ ভালই হইয়াছে, সে স্পষ্ট করিয়া ফিরাইয়া দিয়াছে । হঠাৎ তাহার বড় মাতুলকে মনে পড়িল । সেই সদাচারী, নিষ্ঠাবান, পণ্ডিত ব্রাহ্মণ একদিন তাহদের বাটতে অন্নাহার করিতে অস্বীকার করিয়াছিলেন। স্বীকার করিবার জো নাই করুণাময়ী তাহা জানিতেন, তথাপি স্বামীর সহিত ভ্রাতার মনোমালিষ্ঠ বঁাচাইতে কি একটা কৌশল অবলম্বন করিতে চাহিয়াছিলেন। কিন্তু দরিদ্র ব্রাহ্মণ তাহাতে মৃদু হাসিয়া কহিয়াছিলেন, না দিদি, সে হতে পারে না । হালদার মহাশয় রাগী লোক, এ অপমান তিনি সইবেন না ; » ፃ 獻 ويتحسسانتاج