পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ত্রয়োদশ সম্ভার).djvu/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পথের দাবী এখানে মা নাই, দাদারা নাই, বৌদিদিরা নাই—স্নেহছায়া কোথাও কিছু নাই— কৰ্ম্মশালার অসংখ্য চক্র দক্ষিণে, বামে, মাথার উপরে, পায়ের নীচে, সৰ্ব্বত্র অন্ধবেগে ঘুরিয়া চলিয়াছে, এতটুকু অসতর্ক হইলে রক্ষা পাইবার কোন পথ নাই,—সমস্ত একেবারে নিষ্ঠুরভাবে অবরুদ্ধ। চোখের দুই কোণ জলে ভরিয়া গেল, অদূরে একটা কাঠের বেঞ্চ ছিল, সে তাহারই উপরে বসিয়া পড়িয়া চোখ মুছিতেছে, হঠাৎ পিছন হইতে একটা প্রবল ধাক্কায় উপুড় হইয়া একেবারে মাটির উপর পড়িয়া গেল। তাড়াতাড়ি কোনমতে উঠিয়া দাড়াইতে দেখিল জন পাঁচ-ছয় ফিরিঙ্গি ছোড়া,-কাহারও মুখে সিগারেট, কাহারও মুখে পাইপ,—দাত বাহির করিয়া হাসিতেছে। সম্ভবতঃ যে ধাক্ক মারিয়াছিল সে বেঞ্চের গায়ে একটা লেখা দেখাইয়া কহিল, শাল, ইহ সাহেব লোকগা বাস্তে, তুম্হারা নেহি— লজ্জায় ক্রোধে ও অপমানে অপূৰ্ব্বর সজল চক্ষু আরক্ত হইয়। উঠিল, ঠোট কঁপিতে লাগিল, সে প্রত্যুত্তরে কি যে বলিল, বুঝা গেল না। তাহার অবস্থা দেখিয়া ফিরিঙ্গীর দল অত্যন্ত আমোদ অনুভব করিল, একজন কহিল, শালা দুধবালা, আম্বি গরম করত। —ফটিক মে যায়গা ? সকলে উচ্চৈঃস্বরে হাসিয়া উঠিল,—একজন মুখের সামনে একটা অশ্লীল ভঙ্গী করিয়া শিস দিল । অপূৰ্ব্বর হিতাহিত জ্ঞান প্রায় লোপ হইয়া আসিতেছিল, হয়ত মূহূৰ্ত্ত পরে সে ইহাদের উপরে বাপাইয়া পড়িত, কিন্তু কতকগুলি হিন্দুস্থানী কৰ্ম্মচারী অনতিদূরে বসিয়া বাতি পরিষ্কার করিতেছিল, তাহীরা মাঝখানে পড়িয়া তাঁহাকে টানিয়া প্লাটফর্শ্বের বাহির করিয়া দিল, একটা ফিরিঙ্গী ছোড়া ছুটিয়া আসিয়া ভিড়ের মধ্যে পাগলাইয়া অপূৰ্ব্বর শাদা পিরাণের উপর বুটের পদচিহ্ন আঁকিয়া দিল। এই হিন্দুস্থানী দলের হাত হইতে মুক্তিলাভের জন্য সে টানা-টানি করিতেছিল, একজন তাহাকে ঠেলিয়া দিয়া বিদ্রুপ করিয়া বলিল, আরে বাঙালী বাবু, সাহেব লোক্কা বদন ছুয়েগা ত ইহা এক বরস্ জেল খাটেগা—যাও - ভাগে—একজন কহিল, আরে বাবু হায়, ধাক্কা মাৎ দেও—এই বলিয়া সে তারের গেটট টানিয়া বন্ধ করিয়া দিল। বাহিরে তাহাকে ঘিরিয়া ভিড় জমিবার উপক্রম করিতেছিল, যাহারা দেখিতে পায় নাই তাহার কারণ জিজ্ঞাসা করিল, যাহারা দেখিয়াছে তাহারা নানারূপ মন্তব্য প্রকাশ করিল, একজন হিন্দুস্থানী চীনা-ভাজা বিক্ৰী করে, সে কলিকাতায় থাকিয়া বাঙলা শিখিয়াছিল, সেই ভাষায় বুঝাইয়া দিল যে, এদেশে চট্টগ্রামের অনেক লোক দুধের ব্যবসা করে, তাহারা পিরাণ গায়ে দেয়, জুতা পরে,—অপূৰ্ব্ব আফিসের পোষাক ছাড়িয়া সাধারণ বাঙালীর পোষাকে স্টেশনে আসিয়াছিল, স্বতরাং,—সাহেবরা সেই দুধবালা মনে করিয়া মারিয়াছে, কেরাণীবাৰু जै?