পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ত্রয়োদশ সম্ভার).djvu/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ তোমার ত অফিসে যাবার এখনও ঢের দেরি আছে । চল না বাবা, পথে যেতে যেতে দুটো কথা শুনি । কতকাল যে তোমাদের খবর নিতে পারিনি তার ঠিক নেই। মা ভাল আছেন ? দাদারা ? সকলেষ্ট ভাল আছেন জানাইয়া অপূর্ব প্রশ্ন করিল, আপনি এখন কোথায় যাবেন ? জাহাজ ঘাটে। চল না আমার সঙ্গে । চলুন। আপনাকে কি আর কোথাও যেতে হবে ? নিমাইবাবু হাসিয়া কহিলেন, হতেও পারে । যে মহাপুরুষকে সম্বৰ্দ্ধনা করে নিয়ে যাবার জন্যে দেশ ছেড়ে এতোদূরে আসতে হয়েচে । তার মর্জির উপরেই এখন সমস্ত নির্ভর করচে । তার ফটোগ্রাফ ও গাছে, বিবরণ ও দেওয়া আছে, কিন্তু এখানের পুলিসের বাবার সাধ্য নেই যে র্তার গায়ে হাত দেয় । আমিই পারব কি না তাই ভাবচি। অপূৰ্ণ মহাপুরুষের ইঙ্গিত বুঝিল । কৌতুহলী হইয়া কহিল, মহাপুরুষটি কে কাকাবাবু? যখন আপনি এসেচেন, তখন বাঙালী সন্দেহ নেই,—খুনী আসামী, না ? নিমাইবাবু কহিলেন, ঐট বলতে পারব না বাবা । তিনি যে কি, এবং কি নয় একথা কেউ ঠিক জানে না ! এর বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোন চার্জও নেই, অপচ ধে চার্জ আছে তা আমাদের পিনাল কোডের কোহিনুর । একে চোখে চোখে রাখতে এত বড় গভর্ণমেণ্ট যেন হিমসিম খেয়ে গেল । অপূৰ্ব্ব জিজ্ঞাসা করিল, পোলিটিক্যাল আসামী বুঝি ? নিমাইবাৰু ঘাড় মাড়িয়া বলিলেন, ওরে বাবা, পোলিটিক্যাল আসামী ত লোকে তোদেরও এক সময় বলত। কিন্তু সে বললে এর কিছুই বুঝা যায় না। ইনি হচ্ছেন রাজবিদ্রোহী ! রাজার শক্ৰ ! হা শত্রু বলবার লোক বটে ! বলিহারি তার প্রতিভাকে যিনি. এই ছেলেটির নাম রেখেছিলেন সব্যসাচী । মহাভারতের মতে নাকি তার দুটো হাতই সমানে চলত, কিন্ত প্রপল প্রতাপান্বিত সরকার বাহাদুরের সুগুপ্ত ইতিহাসের মতে এই মানুষটির দশ ইন্দ্ৰিয়ই নাকি বাবা সমান বেগে চলে। বন্দুক-পিস্তলে এর অভ্রান্ত লক্ষ্য, পদ্মানদী সাতার কেটে পার হয়ে যান, বাধে না— সম্প্রতি অনুমান এই যে চট্টগ্রামের পথে পাহাড় ডিঙিয়ে তিনি বাৰ্ম্ম মুলুকে পদার্পণ করেচেন। এখন মাগুলে থেকে নদীপথে জাহাজে চড়ে রেজুনে আসবেন, কিংবা রেলপথে ট্রেনে সওয়ার হয়ে শুভাগমন করচেন, সঠিক সংবাদ নেই,—তবে তিনি যে রওনা হয়েছেন সেকথা ঠিক। তার উদেশ্ব নিয়ে কোন সন্দেহ, কোন তর্ক নেই, – শত্রু মিত্ৰ সকলের মনেই তাই স্থির সিদ্ধান্ত হয়ে আছে এবং নশ্বর দেহটি তার পঞ্চভূতের জিয়ায় না দিতে পার পর্যন্ত এজন্মে যে এর আর পরিবর্তন নেই তাও সকলে