পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ত্রয়োদশ সম্ভার).djvu/৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

भई९-नाश्ङिा-नेरdहे আমাদের দেশে নয়, পৃথিবীর যে-কোন দেশে, যে-কোন যুগে যে-কেউ জন্মভূমিকে তার স্বাধীন করবার চেষ্টা করেচে, তাকে আপনার নয় বলবার সাধ্য আর যার থাক আমার নেই। বলিতে বলিতে কণ্ঠস্বর তার তীক্ষ এবং চোখের দৃষ্টি প্রখর হইয়া উঠিল ; মনে মনে বুঝিল কি কথায় কি কথা আসিয়া পড়িতেছে, কিন্তু সামলাইতে পারিল না, বলিল, তোমার মত সাহস আমার নেই, আমি ভীরু, কিন্তু তাই বলে অবিচারে দণ্ডভোগ করার অপমান আমাকে কম বাজে না রামদাস ! বিনা দোষে ফিরিঙ্গী ছোড়ারা আমাকে যখন লাথি মেরে প্ল্যাটফৰ্ম্ম থেকে বার করে দিলে, এবং এই অন্যায়ের প্রতিবাদ যখন করতে গেলাম, তখন সাহেব স্টেশন-মাস্টার কেবলমাত্র আমাকে দেশী লোক বলেই দেশের স্টেশন থেকে কুকুরের মত দূর করে দিলে,— তার লাঞ্ছনা এই কালো চামড়ার নীচে কম জলে না, তলওয়ারকর । এমন ত নিত্য নিয়তই ঘটচে,—আমার মা, আমার ভাই-বোনকে যারা এইসব সহস্ৰ-কোটী অত্যাচার থেকে উদ্ধার করতে চায়, তাদের আপনার বলে ডাকবার যে দুঃখই থাক, আমি আজ থেকে মাথায় তুলে নিলাম। রামদাসের স্বহী গৌরবর্ণ মুখ ক্ষণকালের জন্য আরক্ত হইয়া উঠিল, বলিল, কই এ ঘটনা ত আমাকে বলেননি । অপূৰ্ব্ব কহিল, বলা কি সহজ রামদাস ? হিন্দুস্থানের লোক সেখানে কম ছিল না, কিন্তু আমার অপমান কারও গায়েই ঠেকল না, এমনি তাদের অভ্যাস হয়ে গেছে। লাথির চোটে আমার যে হাড়পাজরা ভেঙ্গে যায়নি এই স্বখবরে তারা সব খুশী হয়ে গেল। তোমাকে জানাবো কি মনে হলে দুঃখে লজ্জায় ঘূণায় নিজেই যেন মাটির সঙ্গের মিশিয়ে যাই । রামদাস চুপ করিয়া রহিল, কিন্তু তাহার দুই চোখ ছলছল করিয়া আসিল। স্বমুখের ঘড়িতে তিনটা বাজিতে সে উঠিয়া দাড়াইল । বোধহয় কি একটা বলিতে গেল, কিন্তু কিছুই না বলিয়া হঠাৎ হাত বাড়াইয়া অপূৰ্ব্বর ডান হাতটা টানিয়া লইয়া একটা চাপ দিয়া নিঃশব্দে নিজের ঘরে চলিয়া গেল । সেইদিন বিকালে আফিসের ছুটি হইবার পূৰ্ব্বে বড়-সাহেব একখানা লম্বা টেলিগ্রাম হাতে অপূৰ্ব্বর ঘরে ঢুকিয়া কছিলেন, আমাদের ভামোর অফিসে কোন শৃঙ্খলাই হচ্ছে না। ম্যানডালে, শোএবো, মিকৃথিলা এবং এদিকে প্রোম, সব ক’টা অফিসেই গোলযোগ ঘটচে। আমার ইচ্ছা তুমি একবার সবগুলো দেখে এসো। আমার অবর্তমানে সমস্ত ভারই ত তোমার,—একটা পরিচয় থাকা চাই,- মৃতরাং বেশি দেরি না করে কাল-পরও যদি একবার— অপূৰ্ব্ব তৎক্ষণাৎ সন্মত হইয়া বলিল, আমি কালই বার হয়ে যেতে পারি। ●●