পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ত্রয়োদশ সম্ভার).djvu/৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পথের দাবী ভাড়া হইয়া আসিলে জিনিসপত্র বোকাই দিয়া বাসার সম্মুখে আসিয়া দাড়াইতে মিনিট-দশেক মাত্র লাগিল । কিন্তু উপরের দিকে চাহিয়া তাহার ক্রোধের অবধি রছিল না। তেওয়ারীর কোন উৎকণ্ঠই নাই, রাস্তার দিকে বারান্দার কবাটট। পৰ্য্যস্ত খোলে নাই, গাড়ির শব্দে একবার নামিয়াও আসিল না। দ্রুতপদে উঠিয়া গিয়া দ্বারের উপরে সজোরে করাঘাত করিয়া ডাকিল, তেওয়ারী ! ওরে ও তেওয়ারী ! ক্ষণকাল পরে আস্তে, অত্যন্ত সাবধানে কবাট খুলিয়া গেল। কুদ্ধ অপূৰ্ব্ব ঘরের মধ্যে পা বাড়াইবে কি, বিস্ময়ে অবাক ও হতবুদ্ধি হইয়া গেল। স্বমুখে দাড়াইয়া ভারতী। তাহার এ কি মূৰ্ত্তি ! পায়ে জুতা নাই, পরণে একখানি কালে রঙের শাড়ি, চুল শুকনো এলো-মেলো, মুখের উপর শাস্ত গভীর বিষাদের ছায়,এ যেন কোন বহুদূরের তীর্থযাত্রী, রোদে পুড়িয়া, জলে ভিজিয়া, অনাহারে অনিদ্রায় রাত্ৰি-দিবা পথ চলিয়াছে— যে কোন মুহূর্তেই পথের পরে পড়িয়া মরিতে পারে। ইহার প্রতি কেহ যে কোনদিন রাগ করিতে পারে অপূৰ্ব্ব মনে করিতেই পারিল না। ভারতী মাথা নোয়াইয়া একটু নমস্কার করিয়া আস্তে আস্তে বলিল, আপনি এসেচেন, এবার তেওয়ারী বাঁচবে। ভয়ে অপূৰ্ব্বর স্বর জড়াইয়া গেল, কহিল, কি হয়েচে তার ? ভারতী তেমনি মুম্বকণ্ঠে বলিল, এদিকে অনেকের বসন্ত হচ্চে, তারও হয়েচে । কিন্তু আপনি ত এখন এত পরিশ্রমের পরে এঘরে ঢুকতে পাবেন না। উপরের ঘরে চলুন, ঐখানে বরঞ্চ স্বান করে একটু জিরিয়ে নীচে আসবেন। তাছাড়া ও ঘুমোচ্ছে জাগলে আপনাকে খবর দেব । অপূৰ্ব্ব আশ্চৰ্য্য হইয়া কহিল, উপরের ঘরে ? ভারতী বলিল, ই । ঘরটা এখনো আমাদের আছে, কিন্তু আমি চলে গেছি । বেশ পরিষ্কার করা আছে, কলে জল আছে, কেউ নেই, আপনার কষ্ট হবে না, চলুন। কিন্তু আপনার লোকজন কই ? সঙ্গের জিনিসপত্রগুলো তারা ওইখানেই নিয়ে আম্বক। কিন্তু তাদের ত আমি স্টেশন থেকে ছেড়ে দিয়েছি। তারাও ত আমারি মত ক্লান্ত হয়েছিল । ভারতী কহিল, তা বটে, কিন্তু এখন কি কুলি পাওয়া যাবে ? আচ্ছ, দেখি । আপনাকে দেখতে হবে না, আমিই দেখচি। ওই কটা জিনিস আমি নিজেই আনতে পারবো, বলিয়া অপূৰ্ব্ব নীচে যাইতেছিল, গাড়োয়ান মুখ বাড়াইয়া ভাড়া চাহিল। ভারতী তাহাকে ইসারায় উপরে ডাকিয়া কহিল, এখন ত লোক পাওয়া যাবে