পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ত্রয়োদশ সম্ভার).djvu/৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পথের দাবী অপূৰ্ব্ব তাহার আচ্ছন্ন ভাব জোর করিয়া কাটাইয়া মুখ তুলিয়া জিজ্ঞাসা করিল, কিন্তু আপনি যে বললেন সেখানে গেলে কেউ বঁাচে না ? ভারতী কহিল, কেউ বঁাচে না এ কথা ত বলিনি । অপূৰ্ব্ব অত্যন্ত মলিনমুখে বলিল, তাহলে বেশি লোকেই ত মরে যায় ? ভারতী মাথা নাড়িয়া বলিল, তা যায় । এই জন্যই জ্ঞান থাকতে কেউ সেখানে কিছুতে যেতে চায় না। অপূৰ্ব্ব চুপ করিয়া ক্ষণকাল বসিয়া থাকিয়া জিজ্ঞাসা করিল, আচ্ছ, তেওয়ারীর কি কিছু জ্ঞান নেই ? ভারতী কহিল, কিছু আছে বই কি । সব সময়ে না থাকলেও মাঝে মাঝে সমস্তই টের পায় । এই সময়ে তেওয়ারী সহসা কি এক প্রকার আর্তনাদ করিয়া উঠিতে অপূৰ্ব্ব এমন চমকিয়া উঠিল যে, ভারতী তাহা স্পষ্ট দেখিতে পাইল। সে কাছে আসিয়া রোগীর মুখের উপর ঝুঁকিয়া পড়িয়া সস্নেহে জিজ্ঞাসা করিল, কি চাই তেওয়ারী ? তেওয়ার ঠোট নাড়িয়া যাহা বলিল অপূৰ্ব্ব তাহার কিছুই বুঝিল না, কিন্তু ভারতী সাবধানে তাহাকে পাশ ফিরাইয়া দিয়া ঘটি হইতে একটুখানি জল তাহার মুখে দিয় কানে কানে কহিল, তোমার বাবু এসেছেন যে । প্রত্যুত্তরে তেওয়ারী অব্যক্ত ধ্বনি করিল, ডান হাতটা একবার তুলিতে চেষ্টা করিল, কিন্তু নাড়িতে পারিল না। পরক্ষণেই দেখা গেল তাহার নিমীলিত চোখের কোণ দিয়া জল গড়াইয়া পড়িতেছে। অপূৰ্ব্বর নিজের দুই চক্ষু অশ্রপূর্ণ হইয়া উঠিল, তাড়াতাড়ি কোচার খুঁট দিয়া তাহা সে মুছিয়া ফেলিল, কিন্তু থামাইতে পারিল না—বারে বারে সেই দুটি আর্দ্র চক্ষু প্লাবিত করিয়া অজস্র ধারায় করিয়া পড়িবার চেষ্টা করিতে লাগিল। মিনিট দুই-তিন কেহ কোন কথা কহিল না। সমস্ত ঘরখানি দুঃখ ও শোকের ঘন-মেঘে যেন থম্ থম্ করিতে লাগিল। কথা কহিল প্রথমে ভারতী। সে একটুখানি সরিয়া আসিয়া চুপি চুপি বলিল, কি আর করা যাবে, হাসপাতালেই পাঠিয়ে দিন । অপূৰ্ব্ব চোখের উপর হইতে তখনও আবরণ সবাইতে পারিল না, কিন্তু মাথা নাড়িয়া জানাইল, না । ভারতী তেমনি আন্তে আস্তে কহিল, সেই ভাল । আমি এখন তাহলে চললুম। যদি সময় পাই কাল একবার আসবো। তখনও অপূৰ্ব্ব চোখ খুলিতে পারিল না, স্তন্ধ হইয়া বসিয়া রছিল। যাইবার శ్రీe)