পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ত্রয়োদশ সম্ভার).djvu/৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ ভারতী বলিল, আর আমিই শুশ্ৰুষা করে তাকে ভাল করে তুলি, না ? তাহার শান্ত কঠিন কণ্ঠস্বর অপূৰ্ব্ব লক্ষ্যই করিল না, কৃতজ্ঞতায় পূর্ণ হইয়া উত্তর দিল, সে আপনার দয়া। তেওয়ারী বাচুক, কিন্তু আপনিই ত তার প্রাণ দিলেন। ভারতী একটুখানি হাসিল । কহিল, ম্লেচ্ছতে প্রাণ দিলে দোষ নেই, মুখে জল দিলেই তার প্রায়শ্চিত্ত চাই, না ? এই বলিয়া সে পুনরায় একটু হাসিয়া বলিল, আচ্ছা, এখন আমি চললাম। কাল যদি সময় পাই ত একবার দেখে যাবো । এই কথা বলিয়া সে যাইতে উষ্ঠত হইয়া হঠাৎ ফিরিয়া দাড়াইয়া কহিল, আর যদি আসতে না পারি ত তেওয়ারী ভাল হলে তাকে বলবেন, আপনি না এসে পড়লে আমি যেতাম না, কিন্তু ম্লেচ্ছদেরও একটা সমাজ আছে, আপনার সঙ্গে একঘরে রাত্রি কাটালে তারাও ভাল বলে না । কাল সকালে আপনার পিয়ন এলে তলওয়ারকরবাবুকে খবর দেবেন। তিনি পাকা লোক, সমস্ত ব্যবস্থাই করে দিতে পারবেন । আচ্ছা, নমস্কার । অপূৰ্ব্ব কহিল, পাশ ফিরিয়ে দিলে ওর লাগবে না ? ভারতী বলিল, না । রাত্রে যদি বিছানা বদলে দেবার দরকার হয় ? কি করে দেব ? ভারতী কহিল, সাবধানে দেবেন। আমি মেয়েমানুষ হয়ে যদি পেয়ে থাকি আপনি পারবেন না ? অপূৰ্ব্ব শঙ্কিতমুখে স্থির হইয়া রহিল। ভারতী যাইবার জন্ত দ্বার খুলিতেই অপূৰ্ব্ব সভয়ে বলিয়া উঠিল, আর যদি হঠাৎ বসে ? যদি কাদে ? ভারতী এ-সকল প্রশ্নের আর কোন জবাব দিবার চেষ্টা না করিয়া ধীরে ধীরে বাহির হইয়া সাবধানে দ্বার বন্ধ করিয়া দিয়া চলিয়া গেল। তাহার মৃদ্ধ পদশব কাঠের সিড়ির উপরে যতক্ষণ শুনা গেল ততক্ষণ পৰ্যন্ত অপূৰ্ব্ব কাঠের মুক্তির মত বসিয়া বুহিল, কিন্তু শব্দ থামিবার সঙ্গে সঙ্গেই যেন তাহার চোখের উপরে কোথা হইতে একটা কালো জাল নামিয়া আসিয়া সমস্ত দেহ কি করিয়া যে উঠিল সে জীবনে কখনো অনুভব করে নাই । ভয়ে ছুটিয়া গিয়া বারান্দার কপাট খুলিয়া ফেলিয়া নীচে চাহিয়া দেখিল ভারতী দ্রুত পদে রাস্তায় চলিয়াছে । মিস জোসেফ নামটা সে মুখ দিয়া উচ্চারণ করিতেই পারিল না, উচ্চকণ্ঠে ডাক দিল, ভারতী ! ভারতী মাথা তুলিয়া চাহিতে অপূৰ্ব্ব দুই হাত জোড় করিয়া কহিল, একবার আমুন—মুখ দিয়া আর তাহার কথা বাহির হইল না। ভারতী দ্বিরুক্তি না করিয়া ফিরিল। মিনিট-দুই পরে দ্বার খুলিয়া ঘরে ঢুক্ৰিয়া দেখিল অপূৰ্ব্ব নাই, তেওয়ারী একাকী পড়িয়া আছে। আগাইয়া আসিয়া উকি মারিয়া দেখিল বাধাদায় সে নাই ዓኟ