পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ত্রয়োদশ সম্ভার).djvu/৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ না হয়ে আমার দাদাদের কেউ হলে আপনার এত কথা আজ চলত না। আপনাকে দিয়েই র্তারা সব কাজ করিয়ে নিতেন । ভারতী বুঝিতে পারিল না। অপূৰ্ব্ব কহিল, দাদার ছোন না, খান না এমন জিনিসই নেই। মুর্গি এবং হোটেলের ডিনার না হ’লে ত তাদের খাওয়াই হয় না। ভারতী আশ্চৰ্য্য হইয়া কহিল, বলেন কি ? অপূৰ্ব্ব কহিল, ঠিক তাই। বাবা ত অৰ্দ্ধেক ক্রীশ্চন ছিলেন বললেই হয় । মাকে কি এই নিয়ে কম দুঃখ পেতে হয়েছে! - ভারতী উৎসুক হইয়া কহিল, সত্য নাকি ? কিন্তু মা বুঝি ভয়ানক হিন্দু ? অপূৰ্ব্ব বলিল, ভয়ানক আর কি, হিন্দুঘরের মেয়ের যথার্থ যা হওয়া উচিত, তাই। মায়ের কথা বলিতে তাহার কণ্ঠস্বর করুণ এবং স্নিগ্ধ হইয়া উঠিল, বলিল, বাড়িতে দুই বউ, তবু মাকে আমার নিজে রোধে খেতে হয়। কিন্তু এমনি মা যে কখখনো কারু ওপর জোর করেন না, কখখনো কাউকে এর জন্তে অজুযোগ করেন না। বলেন, আমিও ত নিজের আচার-বিচার ত্যাগ করে আমার স্বামীর মতে মত দিতে পারিনি, এখন ওরাও যদি আমার মতে সায় দিতে না পারে ত নালিশ করা উচিত নয়। আমার বুদ্ধি এবং আমার সংস্কার মেনেই যে বউ-ব্যাটাদের চলতে হবে তার কি মানে আছে ? ভারতী ভক্তি ও শ্রদ্ধায় অবনত হইয়া কহিল, মা সেকালের মানুষ, কিন্তু ধৈর্য্য ত খুব বেশী । অপূৰ্ব্ব উদ্দীপ্ত হইয়া বলিল, ধৈৰ্য্য ? মায়ের ধৈর্ঘ্যের কি সীমা আছে নাকি ? আপনি তাকে দেখেননি, কিন্তু দেখলে একেবারে আশ্চৰ্য্য হয়ে যাবেন বলে দিচ্চি । ভারতী প্রসন্ন মৌন মুখে একদৃষ্টি চাহিয়া রহিল, অপূৰ্ব্ব ফলের খোসা ছাড়ানো বন্ধ রাখিয়া বলিতে লাগিল, ধরলে, সমস্ত জীবনই মা আমার দুঃখ পেয়ে আসচেন এবং সমস্ত জীবনই স্বামী-পুত্রদের ম্লেচ্ছাচার বাড়ির মধ্যে নিঃশব্দে সহ করে আসচেন। তার একটি মাত্র ভরসা আমি । অমুখে-বিন্ধথে কেবল আমার হাতেই ছুটে হবিস্ত সিদ্ধ তিনি মুখে দেন। ভারতী কহিল, এখন ত তার কষ্ট হতে পারে। অপূৰ্ব্ব কহিল, পারেই ত। হয়ত হচ্চেও! তাই ত আমাকে তিনি প্রথমে ছেড়ে দিতে চাননি । কিন্তু, আমিও ত চিরকাল ঘরে বসে থাকতে পারিনে ! কেবল তার একটি আশা আমার বউ এলে আর তাকে রে ধে খেতে হবে না ! ভারতী একটুখানি হাসিয়া কহিল, তার সেই আশাটি কেন পূর্ণ করেই এলেন না সেই ত উচিত ছিল । ግቈ