পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈকুণ্ঠের উইল দিকে চোখ পৰ্য্যস্ত ফেরালো না। নইলে আশু মল্লিকের ছেলে পাশ হয়, আর ও হতে পারে না ! সত্যিই কি না, ওকেই জিজ্ঞেস করে দেখ দেখি মা। বলিয়া জয়লাল মাস্টার লাঠিটা তুলিয়া লইয়া সহসা গোকুলের প্রতি একটা খোচানোর ভঙ্গী করিয়াই আপাততঃ কোনমতে র্তার অস্থি-মজ্জাগত ছেলে-ঠাঙানোর প্রবৃত্তিটা শাস্ত করিয়া লইলেন। কিন্তু গোকুল ভয়ে শিহরিয়া উঠিল। নিমিষের মধ্যে ভবানী দুই বাহু বাড়াইয়া তার এই সপত্নীপুত্রটিকে বুকের কাছে টানিয়া লইলেন। গোকুলের মা নাই। মাকে তাহার মনেও পড়ে না । এই বিমাতার কাছেই সে মানুষ হইয়াছে। আজই ইস্কুল হইতে ফিরিয়া কাদিতে কঁাদিতে যখন সে র্তাহার কাছে আসিয়া পড়িল, তখন হইতে আর তাহাকে তিনি কাছ-ছাড়া করেন নাই এবং এতক্ষণে র্তাহাদের চুপি চুপি এই সকল কথাই হইতেছিল। গোকুলের মাথায় মুখে হাত বুলাইয়া স্নেহাত্র মূছকণ্ঠে বলিলেন, ই বাবা, আর সব ছেলেরা বই দেখছিল, তুমি শুধু কোনদিকে তাকিয়ে দেখওনি ? গোকুল কিছুই বলিতে পারিল না। নিজের অক্ষমতার ইহাওঁ একটা প্রকৃষ্ট প্রমাণ মনে করিয়া সে লজ্জায় একেবারে অধোবদন হইয়া গেল। কিন্তু কথাটা ঘরের মধ্যে বৈকুণ্ঠের কানে যাওয়ায় তিনি হিসাবের খাতা হইতে মুখ তুলিয়া একেবারে কান খাড়া করিয়া রহিলেন । * ভবানী মৃদু হাসিয়া কহিলেন, এ-বছর খুব মন দিয়ে পড়লে আসচে-বছর ও-ও ফাস্ট হতে পারবে । বিমাতার এই স্নেহের কণ্ঠস্বর বাড়ুৰ্য্যেমশাই চিনিতে পারিলেন না। সপত্নীপুত্রের প্রতি স্ত্রীলোকের বিদ্বেষ তাহার কাছে এমনি স্বতঃসিদ্ধ সত্য যে, কোথাও কোন ক্ষেত্রেই যে ইহার ব্যতিক্রম ঘটিতে পারে, সে কথাও তাহার মনে উদয় হইল না। ইহাকে একটা মৌখিক শিষ্টতামাত্র জ্ঞান করিয়া তিনি গোকুলকে আরও তুচ্ছ করিয়া দেখাইবার অভিপ্রায়ে জিহবার দ্বারা তালুতে একপ্রকার শব্দ উৎপাদন করিয়া বলিলেন, হায় হায়! গোকুলো হবে ফাস্ট। পূবের সূৰ্য উঠবে পশ্চিমে। যে ফাস্ট হবে মা, সে ঐ তোমার বঁ-দিকে শুনচে । বলিয়া তিনি অঙ্গুলিসক্ষেতে বিনোদকে নির্দেশ করিয়া হঠাৎ একটুখানি কাষ্ঠহাসির রসান দিয়া বলিলেন, তাই কি ছোড়ার লঙ্গ-সরম আছে। উন্টে ছেলেদের সঙ্গে কোদল করছিল যে, আমি পাশ হয়নি বটে, কিন্তু আমার ছোট ভাই যে সকলের প্রথম হয়েচে । তোদের ক'টা ভাই এমন ভবল প্রমোশন পেয়েচে বল ত রে! শোন একবার কথা মা ! ছোট ফাস্ট হয়েচে–কোথায় ও লক্ষার মরে যাবে, না ওর দেমাক দেখ ! > o. g. 〉・電ー33