পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/১২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈকুণ্ঠের উইল গোকুল পিতার চোখ মুছাইয়া দিলে তিনি বলিলেন, চোখে তাকে দেখতে পেলুম না, কিন্তু তাকে বলিস আমি আশীৰ্ব্বাদ করে যাচ্চি, একদিন সে ভাল হবে। এমন মায়ের পেটে জন্মে কখনো এ ভাবে চিরকাল কাটাতে পারবে না। দেখিল বাবা, সেদিন তোর ছোট ভাইকে যেন ফেলিসনে । আর এই তোমার মা রইলেন—অনেক তপস্তায় তবে এমন মা মেলে গোকুল । গোকুল শিশুর মত কঁাদিতে কঁাদিতে কহিল, বাবা, আমার মা আমারই রইলেন, কিন্তু বিনোদকে আপনি অৰ্দ্ধেক সম্পত্তি দিয়ে যান । বৈকুণ্ঠ কঠিলেন, না গোকুল, আমার অনেক দুঃখের সম্পত্তি—এ নষ্ট হতে দেখলে পরকালে বসেও আমার বুকে শেল বাজবে। এ আমি কিছুতেই সইতে পারব না। —বলিয়া অনেকক্ষণ পর্য্যন্ত ছেলের মুখের পানে চাহিয়া, বোধ করি বা মনে মনে র্তাহার শেষ আশীৰ্ব্বাদ করিয়া চোখ বুজিলেন । গোকুল পায়ের উপর পড়িয়া ফুলিয়া ফুলিয়া কাদিতে লাগিল। বৈকুণ্ঠ ধীরে ধীরে পাশ ফিরিয়া শুইয়া চুপি চুপি বলিলেন, ছেলেরা রইল ছোটবোঁ, আমি এবার চললুম। আর কথা কহিলেন না। এবং পরদিন সূর্য্যোদয়ের সঙ্গে-সঙ্গেই র্তাহার প্রাণ বাহির হইয়া গেল। তখন অনেকেই অনেক কথা কহিল । বৈকুণ্ঠ পাকা ব্যবসায়ী ছিলেন, কিন্তু খাটি লোক ছিলেন । বিশেষতঃ অত্যন্ত দীন অবস্থা হইতে বড় হইতে পারিয়াছিলেন বলিয়া শত্রু-মিত্র দু-ই তার একটু বেশী পরিমাণে ছিল। মিত্রপক্ষের গুণগান অত্যুক্তিকে ছাড়াইয়া গেল । আবার শক্রপক্ষের নিন্দ করিতেও ত্রুটি করিল না । তাহারা কৃপণ বলিয়া, চশমথোর বলিয়া, বৈকুণ্ঠ মুীর স্ফীত অঙ্গুলির সহিত কদলী-কাণ্ডের উপমা দিয়া বোধ করি বেশ একটু আত্মপ্রসাদ লাভ করিল। তবে এই একটা অতি তুচ্ছ গুণের কথা তাহারাও অস্বীকার করিল না যে, আর যাহাই হোক লোকটা জোচ্চোর বাটপাড় ছিল না। নিজের ন্যায্য পাওনার বেশী কাহাকেও কোনদিন একটি তামার পয়সাও ফাকি দেয় নাই । বস্তুত: ব্যবসা-সম্বন্ধে এই বিদ্যাটিই তিনি বিশেষ করিয়। তাহার বড়ছেলেকে শিখাইয়া গিয়াছিলেন । বৈকুণ্ঠ বার বার বলিতেন, গোকুল, আমার এই কথাটি কোনদিন ভূলিস্নে বাবা যে, ঠকিয়ে কখনো মহাজনকে মারা যায় না । তাতে শেষ পৰ্য্যস্ত নিজেকেই মরতে इम्न । - নিজের পলিত মস্তকটি দেখাইয়া বলিতেন, এই মাথাটার উপর দিয়ে অনেক ঝড়-বৃষ্টি বয়ে গেছে গোকুল, অনেক দুঃখ-কষ্ট পেয়েচি,কিন্তু এর জোরে কখনো কারুর কাছে মাথা হেঁট করিনি। আমার এই মর্য্যাদাটুকু বজায় রাখিল বাবা। " • * S $ 3