[ বেলা অপরাইপ্রায়। চণ্ডীগড়ের সঙ্কীর্ণ গ্রাম্যপথের পরে সন্ধ্যার ধূসর ছায়া নামিয়া আসিতেছে। অদূরে বীজগাঁ’র জমিদার কাছারি-বাটীর ফটকের কিয়দংশ দেখা যাইতেছে। জন-দুই পথিক দ্রুতপদে চলিয়া গেল; তাহাদেরই পিছনে একজন কৃষক মাঠের কর্ম শেষ করিয়া গৃহে ফিরিতেছিল, তাহার বাঁ কাঁধে লাঙ্গল, ডান হাতে ছড়ি, অগ্রবর্তী অদৃশ্য বলদযুগলের উদ্দেশ্যে হাঁকিয়া বলিতে বলিতে গেল, “ধলা, সিধে চ’ বাবা, সিধে চল্! কেলো, আবার আবার। আবার পরের গাছপালায় মুখ দেয়!”
কাছারির গোমস্তা এককড়ি নন্দী ধীরে ধীরে প্রবেশ করিল এবং উৎকণ্ঠিত শঙ্কায় পথের একদিকে যতদূর দৃষ্টি যায় গলা বাড়াইয়া কিছু একটা দেখিবার চেষ্টা করিতে লাগিল। তাহার পিছনের পথ দিয়া দ্রুতপদে বিশ্বস্তর প্রবেশ করিল। সে কাছারির বড় পিয়াদা, তাগাদায় গিয়াছিল, অকস্মাৎ সংবাদ পাইয়াছে বীজগাঁ’র নবীন জমিদার জীবানন্দ চৌধুরী চণ্ডীগড়ে আসিতেছেন। ক্রোশ-দুই দূরে তাহার পালকী নামাইয়া বাহকেরা ক্ষণকালের জন্য বিশ্রাম লইতেছিল, আসিয়া পড়িল বলিয়া।]
বিশ্বম্ভর। নন্দীমশাই, দাঁড়িয়ে করতেছ কি? হুজুর আসচেন যে!
এককড়ি। (চমকিয়া মুখ ফিরাইল। এ দুঃসংবাদ ঘণ্টাখানেক পূর্বে তাহার কানে পৌছিয়াছে। উদাস-কণ্ঠে কহিল ) হু।
বিশ্বম্ভর। হু কি গো। স্বয়ং হুজুর আসছেন যে!
এককড়ি। ( বিকৃত-স্বরে) আসচেন ত আমি করব কি? খবর নেই, এত্তাল নেই—হুজুর আসচেন! হুজুর বলে ত আর মাথা কেটে নিতে পারবে না।
বিশ্বম্ভর। (এই আকস্মিক উত্তেজনার অর্থ উপলব্ধি না করিতে পারিয়া একমুহূর্ত মৌন থাকিয়া শুধু কহিল) আরে, তুমি কি মরিয়া হয়ে গেলে নাকি?
এককড়ি। মরিয়া কিসের! মামার বিষয় পেয়েচে বই ত কেউ আর বাপের বিষয় বলবে না। তুই জানিস্ বিশু, কালিমোহনবাবু ওকে দূর করে দিয়েছিল, বাড়ি ঢুকতে পৰ্যন্ত দিত না। তেজপুত্তরের সমস্ত ঠিক-ঠাক, হঠাৎ খামওকা মরে গেল বলেই ত জমিদার! নইলে থাকতেন আজ কোথায়? আমি জানিনে কি?