পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/১৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈকুণ্ঠের উইল গোকুল উদাসভাবে জবাব দিল, সে-সব মায়ের সঙ্গে সঙ্গে গেছে—রোধে খাওয়াৰে কে? মনোরমা অভিমানভয়ে কহিল, রাধতে কি শুধু মা-ই শিখেছিলেন—আমরা শিখিনি ? গোকুল কহিল, সে তোমার বাপ ভাইকে খাইয়ে, আমার দরকার নেই। মনোরমার মা কালীঘাটের ফেরত একদিন আসিয়া উপস্থিত হইলেন। সৎ-শাশুড়ী রাগ করিয়া চলিয়া গিয়াছেন, মেয়ের ভাঙা সংসার গুছান আবশ্বক বিবেচনা করিয়া তিনি দুই-চারিদিন থাকিয়া যাইতেই মনস্থ করিলেন । দেখিতে দেখিতে বিকল সংসার মেরামত হইয়া আবার স্বন্দর চলিতে লাগিল, এবং কর্ণধার হইয়া দৃঢ়হস্তে হাল ধরিয়া দিনের পর দিন কাটাইতে লাগিলেন। পাড়ার লোকেরা প্রথমে কথাটা লইয়া আন্দোলন করিল, কিন্তু কলিকালের স্বধৰ্ম্মে দুই-চারিদিনেই নিরস্ত হইল । হাবুর মার ঘর এই পথে । সে মাঝে মাঝে দেখা দিয়া যাইত। তার মুখে ভবানী গোকুলের নূতন সংসারের কাহিনী শুনিতে পাইলেন, কিন্তু ভালো-মন্দ কোন কথা কহিলেন না । সেদিন আসিবার সময় সেই যে গোকুল গাড়ির কাছে দাড়াইয়া রুদ্ধকণ্ঠে বলিয়াছিল, তাহদের সমস্ত সম্বন্ধের এই শেষ, তখন নিজের অভিমানের কথাটা তিনি গ্রাহ করেন নাই। কিন্তু একমাসকাল যখন কাটিয়া গেল, গোকুল উহার সংবাদ লইল না, তখন তিনি মনে মনে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিলেন । সে যে সত্যসত্যই উহাকে ত্যাগ করিবে, ছোটভাইকে এমন করিয়া ভুলিয়া থাকিবে, এত কাও, এত রাগারগির পরেও সে-কথ। নিঃসংশয়ে বিশ্বাস করিতে পারেন নাই । তাই আজ হাবুর মার মুখে ঘরের মধ্যে তাহার শ্বশুর-শাশুড়ীর দৃঢ়-প্রতিষ্ঠার বার্ত পাইয়। তিনি শুধু স্তব্ধ হইয়াই বুহিলেন। নূতন বাসায় আসিয়া দুই-চারিদিন মাত্র বিনোদ সংযত ছিল, তার পরেই সে স্বরূপ প্রকাশ করিল। মায়ের কোন তত্ত্বই প্রায় সে লইত না ; রাত্রে বাড়িতে থাকিত না ; সকালে যখন ঘরে আসিত, তখন দুঃখে লজ্জায় ভবানী তাহার প্রতি চাহিতে পারিতেন না । এইমাত্র গুনিয়াছিলেন, সে চাকরি করে । কিন্তু কি চাকরি, কত মাহিনী, কিছুই জানিতেন না। মুতরাং এখন এইটাই তাহার একমাত্র সাত্বনা ছিল যে, আর যাই হোক, তিনি ছেলেকে বিষয় হইতে বঞ্চিত করিবার নিমিত্ত হইয়া অন্যায় করেন >拿>