পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করার সময় সমস্যা ছিল।
শরৎ-সাহিত্য-সংগ্রহ

 এককড়ি। ভৈরবী ত কারু নাম নয় হুজুর। গড়চণ্ডীর প্রধান সেবিকাদের ওই হলো উপাধি।বর্ত্তমানে ভৈরবীর নাম ষােড়শী, এর আগে যিনি ছিলেন তার নাম ছিল মাতঙ্গিনী। মার আদেশে তাঁর সেবায়েত কখনাে পুরুষ হতে পারে না, চিরদিন মেয়েরাই হয়ে আসছে।

 জীবানন্দ। তাই নাকি? এ ত কখনাে শুনিনি!

 এককড়ি। মায়ের আদেশে বিয়ের তেরাত্রি পরে স্বামীকে আর ভৈরবীর স্পর্শ করবারও জো নেই। তাই দূরদেশ থেকে দুঃখী গরীবদের একটা ছেলে ধরে এনে বিয়ে দিয়ে পরের দিনই টাকাকড়ি দিয়ে সেই যে বিদায় করা হয়, আর কখনাে কেউ তার ছায়াও দেখতে পায় না। এই নিয়ম, এই-ই চিরকাল ধরে হয়ে আসছে।

 জীবানন্দ। (সহাস্যে ) বল কি এককড়ি, একেবারে দেশান্তর? ভৈরবী মানুষ, রাত্রে নিরিবিলি একপাত্র সুধা ঢেলে দেওয়া – গরমমশলা দিয়ে চাট্টি মহাপ্রসাদ বেঁধে খাওয়ানাে—একেবারে কিছুই করতে পায় না?

 এককড়ি। (মাথা নাড়িয়া) না হুজুর, মায়ের ভৈরবীকে স্বামী স্পর্শ করতে নেই, কিন্তু তাই বলে কি স্বামী ছাড়া গাঁয়ে আর পুরুষ নেই? মাতু ভৈরবীকেও দেখেচি, ষােড়শী ভৈরবীকেও দেখচি। লোকগুলাে কি আর খামোকা—তার সাক্ষী দেখুন না -কথায় কথায় হুজুরের সঙ্গেই মামলা-মোকদ্দমা বাধিয়ে দেয়!

 জীবনানন্দ। মেয়ে-মােহাস্ত আর কি! তাতে দোষ নেই। এককড়ি, আলােটা জালাে ত।

 এককড়ি। ( আলাে জ্বালিয়া) এখন আসি হুজুর।

 জীবানন্দ। আচ্ছা যাও। বইখানা দিয়ে যাও ত।

[ বই দিয়া প্রণাম করিয়া এককড়ি প্রস্থান করিল। জীবানন্দ শুইয়া পুস্তকে মনােনিবেশ করিলেন। একটু পরে বাহিরে কাহার। পায়ের শব্দ হইল ।]

 জীবানন্দ। কে?

 সর্দ্দার। (ঘােড়শীকে লইয়া প্রবেশ করিয়া কহিল) শালা তারাদাস ভাগ, গিয়া। হুজুর, উসকো বেটীকো পাকড় লায়া।

 জীবানন্দ। (বই ফেলিয়া ধড়ফড় করিয়া উঠিয়া বসিয়া বিস্মিতভাবে) কাকে? ভৈরবীকে? (কিছুক্ষণ পরে) ঠিক হয়েচে। আচ্ছা যা।

[ সর্দ্দার অনুচর পাইকদের লইয়া প্রস্থান করিল।]
১০

শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/২০