পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/২১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্রই মেজবে সলজে ফিরিয়া আসিয়া বলিল, আমি ভেবেছিলাম, আপনি খুমিয়ে পড়েচেন । আজ কেমন আছেন দিদি ? হরিলক্ষ্মী কহিল, আজ ঢের ভাল আছি, কই তোমার ছেলেকে আননি ? মেজবোঁ বলিল, আজ সে হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়ল দিদি। 3. হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়ল মানে কি ? অভ্যাস খারাপ হয়ে যাবে বলে আমি দিনের বেলায় বড় তাকে ঘুমোতে দিইনে দিদি । - হরিলক্ষ্মী জিজ্ঞাসা করিল, রোদে রোদে দুরন্তপন করে বেড়ায় না ? মেজবোঁ কহিল, করে বই কি ! কিন্তু ঘুমোনোর চেয়ে সে বরঞ্চ ভালো । তুমি নিজে বুঝি কখনো ঘুমোও না ? মেজবে হাসিমুখে ঘাড় নাড়িয়া বলিল, না। হরিলক্ষ্মী ভাবিয়াছিল, মেয়েদের স্বভাবের মত এবার হয়ত সে তাহার অনবকাশের দীর্ঘ তালিকা দিতে বসিবে, কিন্তু সে সেরূপ কিছুই করিল না । ইহার পরে অস্তান্ত কথাবার্তা চলিতে লাগিল। কথায় কথায় হরিলক্ষ্মী তাহার বাপের বাড়ির কথা, ভাই-বোনের কথা, মাস্টারমশায়ের কথা, স্কুলের কথা এমনকি তাহার ম্যাট্রিক পাশ করার কথাও গল্প করিয়া ফেলিল । অনেকক্ষণ পরে যখন হ’স হইল তখন স্পষ্ট দেখিতে পাইল, শ্রোতা হিসাবে মেজবে যত ভালই লোক, বক্তা হিসাবে একেবারে অকিঞ্চিংকর। নিজের কথা সে প্রায় কিছুই বলে নাই। প্রথমটা লক্ষ্মী লঙ্গ বোধ করিল, কিন্তু তখনই মনে করিল, আমার কাছে গল্প করবার মত তাহার অাছেই বা কি ! কিন্তু কাল যেমন এই বধূটর বিরুদ্ধে মন তাহার অগ্রসর হইয়া উঠিয়াছিল, আজ তেমনি ভারি একটা তৃপ্তি বোধ করিল। দেয়ালের মূল্যবান ঘড়িতে নানাবিধ বাজনা-বাষ্ঠ করিয়া তিনটা বাজিল। মেজবৌ উঠিয়া দাড়াইয়া সবিনয়ে কহিল, দিদি, আজ তা হলে আসি ? লক্ষ্মী সকৌতুকে বলিল, তোমার বুঝি ভাই তিনটে পৰ্য্যন্তই ছুটি ? ঠাকুরপো না-কি কাটায় কাটায় ঘড়ি মিলিয়ে বাড়ি ঢোকেন ? মেজবোঁ কহিল, আজ তিনি বাড়িতে আছেন। আজ কেন তবে আর একটু বসে না ? মেজবে বসিল না, কিন্তু যাবার জন্তও পা বাড়াইল না। আস্তে জান্তে বলিল, দিদি, আপনার কত শিক্ষা-দীক্ষা, কত লেখা-পড়া, আমি পাড়াগায়ের তোমার বাপের বাড়ি বুঝি পাড়াগায়ে ? ३० ♚