পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/২২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্রই পিসীমা বলিলেন, বিপিন মারা গেছে, শুনেচ ত ? লক্ষ্মী শুনে নাই কিছুই, কিন্তু এইমাত্র ধে তাহার খাবার দিয়া গেল, যে সে বিধবা তাহা চাহিলেই বুঝা যায়। ঘাড় নাড়িয়া কহিল, হ্যা। পিসীমা অবশিষ্ট ঘটনাটা বিবৃত করিয়া কহিলেন, যা ধূলোগুড়ে ছিল, মামলায় মামলায় সৰ্ব্বস্ব খুইয়ে বিপিন মারা গেল। বাকী টাকার দায়ে বাড়িটাও যেত। আমরা পরমর্শ দিলাম, মেজবোঁ, বছর দু'বছর গতরে খেটে শোধ দে, তোর অপগও ছেলের মাথা গোজবার স্থানটুকু বাচুক । লক্ষ্মী বিপূর্ণ-মুখে তেমনই পলকহীন চক্ষুতে নিঃশবে চাহিয়া রহিল। পিসীমা সহসা গলা খাটাে করিয়া বলিলেন, তবু আমি একদিন ওকে আড়ালে ডেকে বলেছিলাম, মেজবে, যা হবার তা ত হ’লো, এখন ধার টার করে যেমন করে হোক, একবার কাশী গিয়ে বৌমার হাতে-পায়ে গিয়ে পড়। ছেলেটকে তার পায়ের উপর নিয়ে ফেলে দিয়ে বল গে, দিদি, এর তো কোন দোষ নেই, একে বঁচিাও— কথাগুলি আবৃত্তি করতেই পিসীমার চোখ জল-ভারাক্রাস্ত হইয়া উঠিল, অঞ্চলে মুছিয়া ফেলিয়া বলিলেন, কিন্তু সেই যে মাথা গুজে মুখ বুজে বসে রইল, হা-না একটা জবাব পর্য্যন্ত দিল না । হরিলক্ষ্মী বুঝিল, ইহার সমস্ত অপরাধের ভারই তাহার মাথায় গিয়া পড়িয়াছে। তাহার মুখে সমস্ত অন্ন-ব্যঞ্জন তিতে বিষ হইয়া উঠিল এবং একটা গ্রাসও যেন গল৷ দিয়া গলিতে চাহিল না । পিসীমা কি একটা কাজে ক্ষণকালের জঙ্ক বাহিরে গিয়াছিলেন, তিনি ফিরিয়া আসিয়া খাবারের অবস্থা দেখিয়া চঞ্চল হইয়া উঠিলেন। ডাক দিলেন, বিপিনের বেী ! বিপিনের বেী ! বিপিনের বেী স্বারের বাহিরে আসিয়া দাড়াতেই তিনি ঝঙ্কার দিয়া উঠিলেন। র্তার মুহূৰ্ত্ত পূৰ্ব্বের করুণা চক্ষুর নিমেষে কোথায় উবিয়া গেল, তীক্ষ-স্বরে বলিয়া উঠিলেন, এমন তাচ্ছিল্য করে কাজ করলে ত চলবে না বিপিনের বেী ! বেীমা একটা দানা মুখে দিতে পারলে না, এমনই রোধেচ ! ঘরের বাহির হইতে এই তিরস্কারের কোন উত্তর আসিল না, কিন্তু অপরের অপমানের ভারে লজ্জার ও বেদনায় ঘরের মধ্যে হরিলক্ষ্মীর মাথা ইেট হইয়া গেল । পিসীমা পুনশ্চ কহিলেন, চাকরি করতে এসে জিনিস-পত্র নষ্ট করে ফেললে চলবে মা বাছ, আরও পাঁচজনে যেমন করে কাজ করে, তোমাকে তেমনই করতে হবে, ভা বলে দিচ্চি । 828