পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/২২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ইরিলক্ষ্মী বিপিনের স্ত্রী এবার আস্তে আস্তে বলিল, প্রাণপণে সেই চেষ্টাই করি পিসীমা, আজ হয়ত কি-রকম হয়ে গেছে। এই বলিয়া সে নীচে চলিয়া গেলে, লক্ষ্মী উঠিয়া দাড়াইবামাত্র পিসীমা হায় হায় করিয়া উঠিলেন। লক্ষ্মী মুম্ব-কণ্ঠে কহিল, কেন দুঃখ করচ পিসীম, আমার দেহ ভাল নেই বলেই খেতে পারলাম না—মেজবোঁয়ের রান্নার ক্রটি ছিল না। হাত-মুখ ধুইয়া আসিয়া নির্জন ঘরের মধ্যে হরিলক্ষ্মীর ষেন দম বন্ধ হইয়া আসিতে লাগিল। সৰ্ব্বপ্রকার অপমান সহিয়াও বিপিনের স্ত্রীর হয়ত ইহার পরেও এই বাড়িতেই চাকরি করা চলিতে পারে, কিন্তু আজকের পরে গৃহিণীপনার পণ্ডশ্রম করিয়া তাহার নিজের দিন চলিবে কি করিয়া ? মেজবোঁয়ের একটা সাম্বন তবুও বাকী আছে—তাহ বিনা দোষে দুঃখ-সহার সাত্বনা, কিন্তু তাহার নিজের জন্য কোথায় কি অবশিষ্ট্র রহিল ! রান্ত্রিতে স্বামীর সহিত কথা কহিবে কি, হরিলক্ষ্মী ভাল করিয়া চাহিয়া দেখিতেও পারিল না। আজ তাহার মুখের একটি কথায় বিপিনের স্ত্রীর সকল দুঃখ দূর হইতে পারিত, কিন্তু নিরুপায় নারীর প্রতি যে মাঙ্গুষ এতবড় শোধ লইতে পারে, তাহার পৌরুষে বাধে না, তাহার কাছে ভিক্ষা চাহিবার হীনতা স্বীকার করিতে কোনমতেই লক্ষ্মীর প্রবৃত্তি হইল না । শিবচরণ ঈষৎ হাসিয়া প্রশ্ন করিল, মেজবৌমার সঙ্গে হ’লো দেখা ? বলি কেমন র*াধচে ? হরিলক্ষ্মী জবাব দিতে পারিল না, তাহার মনে হইল, এই লোকটাই তাহার স্বামী এবং সারাজীবন ইহারই ঘর করিতে হইবে মনে করিয়া তাহার মনে হইল, পৃথিবী ६ि१! श्७ ।। পরদিন সকালে উঠিয়াই লক্ষ্মী দাসীকে দিয়া পিসীমাকে বলিয়া পাঠাইল, তাহার জর হইয়াছে, সে কিছুই খাইবে না । পিসীমা ঘরে আসিয়া জেরা করিয়া লক্ষ্মীকে অতিষ্ঠ করিয়া তুলিলেন—তাহার মুখের ভাবে ও কণ্ঠস্বরে তাহার কেমন যেন সন্দেহ হইল, লক্ষ্মী কি একটা গোপন করিবার চেষ্টা করিতেছে। কহিলেন, কিন্তু তোমার ত সত্যিই অমুখ করেনি বৌমা ? লক্ষ্মী মাথা নাড়িয়া জোর করিয়া বলিল, আমার জর হয়েছে ; আমি কিছু খাব না ! ডাক্তার আসিলে তাহাকে স্বারের বাহির হইতে লক্ষ্মী বিদায় করিয়া দিয়া বলিল, আপনি ত জানেন, আপনার ওষুধে আমার কিছুই হয় না—আপনি যান। শিবচরণ আসিয়া অনেক-কিছু প্রশ্ন করিল, কিন্তু একটা কথারও উত্তর পাইল না। 》