পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করার সময় সমস্যা ছিল।
ষোড়শী

( ষোড়শী শিহরিয়া উঠিল ) কিন্তু তোমার ত সে বালাই নেই। পনের-ষোল বছরের মধ্যে তোমার স্বামীকে তুমি ত চোখেও দেখনি। তা ছাড়া তোমাদের ত এতে দোষই নেই।

 ষোড়শী। ( করজোড়ে অশ্রুরুদ্ধকণ্ঠে ) স্বামীকে আমার ভালো মনে নেই সত্যি, কিন্তু তিনি ত আছেন। যথার্থ বলচি আপনাকে, কখনো কোন অন্যায়ই আমি আজ পৰ্য্যন্ত করিনি। দয়া করে আমাকে ছেড়ে দিন—

 জীবানন্দ ( হাঁক দিয়া ) মহাবীর—

 ষোড়শী। ( আতঙ্কে কাঁদিয়া ) আমাকে আপনি মেরে ফেলতে পারবেন, কিন্তু—

 জীবানন্দ। আচ্ছা, ও বাহাদুরী কর গে ওদের ঘরে গিয়ে। মহাবীর—

 ষোড়শী। (মাটিতে লুটাইয়া পড়িয়া কাঁদিয়া ) কারও সাধ্য নেই আমার প্রাণ থাকতে নিয়ে যেতে পারে। আমার যা-কিছু দুর্দ্দশা—যত অত্যাচার আপনার সামনেই হোক-আপনি আজও ব্রাহ্মণ, আপনি আজও ভদ্রলোক।

 জীবানন্দ (কঠিন নিষ্ঠুর হাস্য করিল ) তোমার কথাগুলো শুনতে মন্দ নয়, কিন্তু কান্না দেখে আমার দয়া হয় না! আমি অনেক শুনি। মেয়েমানুষের ওপর আমার এতটুকু লোভ নেই–ভালো না লাগলে চাকরদের দিয়ে দিই। তোমাকেও দিয়ে দিতুম, শুধু এই বোধ হয় আজ প্রথম একটু মোহ জন্মেচে। ঠিক জানিনে—নেশা না কাটলে ঠাওর পাচ্ছিনে।

 মহাবীর। ( দ্বারপ্রান্তে আসিয়া ) হুজুর!

 জীবানন্দ। ( সম্মুখের কবাটটায় আঙ্গুলি-নিৰ্দেশ করিয়া) একে আজ রাত্রের মত ও-ঘরে বন্ধ করে রেখে দে। কাল আবার দেখা যাবে।

 ষোড়শী। (গলদশ্র-লোচনে ) আমার সর্ববনাশটা একবার ভেবে দেখুন হুজুর। কাল যে আমি আর মুখ দেখাতে পারব না।

 জীবানন্দ। দু'একদিন। তার পরে পারবে। সেই লিভারের ব্যথাটা আজ সকাল থেকেই টের পাচ্ছিলাম। এখন হঠাৎ ভারী বেড়ে উঠল—আর বেশী বিরক্ত ক'রো না - যাও।

 মহাবীর। (তাড়া দিয়া) আরে, উঠনা মাগী— গেল!

 জীবানন্দ। ( ভয়ানক ধমক দিয়া ) খবরদার, শুয়োরের বাচ্ছা, ভালো করে কথা বল। ফের যদি কখনো আমার হুকুম ছাড়া কোন মেয়েমানুষকে ধরে আনিস ত গুলি করে মেরে ফেলব। (মাথার বালিশটা পেটের কাছে টানিয়া লইয়া উপুড় হইয়া শুইয়া যাতনায় অস্ফুট আৰ্ত্তনাদ করিয়া) আজকের মত ও-ঘরে বন্ধ থাকো,


১৩