পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/২৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহঁ এখানে হরিশের একটু পুৰ্ব্ববৃত্তান্ত বলা প্রয়োজন। এখন তাহার বয়স চল্লিশের কম নয়, কিন্তু কম যখন সত্যই ছিল সেই পাঠ্যাবস্থার একটু ইতিহাস আছে। পিতা রামমোহন তখন বরিশালের সাব-জজ । হরিশ এম. এ. পরীক্ষার পড়া তৈরী করিতে কলিকাতার মেস ছাড়িয়া বরিশালে আসিয়া উপস্থিত হইল। প্রতিবেশী ছিলেন হরকুমার মজুমদার। স্কুল-ইন্সপেক্টর। লোকটি নিরীহ, নিরহস্কার এবং অগাধ পণ্ডিত । সরকারী কাজে ফুরসৎ পাইলে এবং সদরে থাকিলে মাঝে মাঝে আসিয়া সদরআলা বাহাদুরের বৈঠকখানায় বসিতেন। অনেকেই আসিতেন। টাকওয়ালা মুন্সেফ, দাড়ি ছাট ডেপুটি, মহাস্থবির সরকারী উকিল এবং সহরের অন্যান্য মান্তগণ্যের দল সন্ধ্যার পরে কেহই প্রায় অনুপস্থিত থাকিতেন না । তাহার কারণ ছিল । সদরঅালা নিজে ছিলেন নিষ্ঠাবান হিন্দু। অতএব আলাপ-আলোচনার অধিকাংশই হইত ধৰ্ম্ম সম্বন্ধে। এবং যেমন সর্বত্র ঘটে, এখানেও তেমনি অধ্যাত্ম-তত্ত্বকথার শাস্ত্রীয় মীমাংসা সমাধা হইত খণ্ড-যুদ্ধের অবসানে । সেদিন এমনি একটা লড়াইয়ের মাঝখানে হরকুমার তাহার বঁাশের ছড়িটি হাতে করিয়া আস্তে আস্তে আসিয়া উপস্থিত হইলেন । এই সকল যুদ্ধ-বিগ্রহ ব্যাপারে কোনদিন তিনি কোন অংশ গ্রহণ করিতেন না। নিজে ব্রাহ্ম-সমাজভুক্ত ছিলেন বলিয়াই হোক, অথবা শান্ত মৌন প্রকৃতির মানুষ ছিলেন বলিয়াই হোক, চুপ করিয়া শোনা ছাড়া গায়ে পড়িয়া অভিমত প্রকাশ করিবার চঞ্চলতা তাহার একটি দিনও প্রকাশ পায় নাই। আজ কিন্তু অন্তরূপ ঘটিল। তিনি ঘরে ঢুকিতেই টাকওয়ালা মুন্সেফবাবু তাহাকেই মধ্যস্থ মানিয়া বসিলেন । ইহার কারণ, এইবার ছুটিতে কলিকাতায় গিয়া তিনি কোথায় যেন এই লোকটির ভারতীয় দর্শন সম্বন্ধে গভীর জ্ঞানের একটা জনরব শুনিয়া আসিয়াছিলেন। হরকুমার স্মিতহাস্তে সম্মত হইলেন। অল্পক্ষণেই বুঝা গেল, শাস্ত্রের বঙ্গানুবাদ মাত্র সম্বল করিয়া ইহার সহিত তর্ক চলে না। সবাই খুশী হইলেন, হইলেন না শুধু সাব-জজ বাহাদুর নিজে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি জাতি দিয়াছে তাহার আবার শাস্ত্রজ্ঞান কিসের জন্য ? এবং বলিলেনও ঠিক তাই। সকলে উঠিয়া গেলে র্তাহার পরম প্রিয় সরকারী উকিলবাবুকে চোখের ইঙ্গিতে হাসিয়া কহিলেন, শুনলেন ত ভাদুড়ীমশাই ; ভূতের মুখে রাম নাম আর কি ! ভাদুড়ী ঠিক সায় দিতে পারিলেন না ; কহিলেন, তা বটে। কিন্তু জানে খুব । সমস্ত যেন মুখস্থ। আগে মাস্টারি করত কি-না । হাকিম প্রসন্ন হইলেন না। বলিলেন, ও জানার মুখে আগুন। এরাই হ’লে জ্ঞান-পাপী । এদের আর মুক্তি নেই। १३●