পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/২৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিগাপী ধন্তা-ধ্বপ্তির পরে, রোগী তাহার বাপ-মায়ের দেওয়া মৃত্যুঞ্জয় নাম, তাহার শ্বশুরের দেওয়া মন্ত্রেীষধি, সমস্ত মিথ্যা প্রতিপন্ন করিয়া ইহলোকের লীলা সাঙ্গ করিল। বিলাপী তাহার স্বামীর মাথাটা কোলে করিয়া বসিয়াছিল, সে যেন একেবারে পাথর হইয়া গেল। যাক, তাহার দুঃখের কাহিনীটা আর বাড়াইব না। কেবল এইটুকু বলিয়া শেষ করিব যে, সে সাতদিনের বেশি বঁচিয়া থাকাটা সহিতে পারিল না। আমাকে শুধু একদিন বলিয়াছিল, ঠাকুর, আমার মাথার দিব্যি রইল, এসব তুমি আর কখনো ক’রে না । আমার মাদুলি-কবজ ত মৃত্যুঞ্জয়ের সঙ্গে কবরে গিয়াছিল, ছিল শুধু বিষহরির আজ্ঞা । কিন্তু সে আজ্ঞা ধে ম্যাজিস্ট্রেটের আজ্ঞা নয়, এবং সাপের বিষ যে বাঙালীর বিষ নয়, তাহ আমিও বুঝিয়াছিলাম । একদিন গিয়া শুনিলাম, ঘরে ত আর বিষের অভাব ছিল না, বিলাসী আত্মহত্য করিয়া মরিয়াছে এবং শাস্ত্রমতে সে নিশ্চয়ই নরকে গিয়াছে। কিন্তু যেখানেই যাক, আমার নিজের যখন যাইবার সময় আসিবে, তখন ওইরূপ কোন একটা নরকে যাইবার প্রস্তাবে পিছাইয়া দাড়াইব না, এইমাত্র বলিতে পারি। খুড়োমশাই বোল-আন বাগান দখল করিয়া অত্যস্ত . বিজ্ঞের মত চারিদিকে বলিয়া বেড়াইতে লাগিলেন, ওর যদি না অপঘাতে মৃত্যু হবে, ত হবে কাৱ ? পুরুষমানুষ অমন একটা ছেড়ে দশটা করুক না, তাতে ত তেমন আসে-যায় না—ন হয় একটু নিন্দাই হ’তো। কিন্তু, হাতে ভাত খেয়ে মরতে গেলি কেন ? নিজে ম’লো, আমার পর্য্যস্ত মাথা ইেট করে গেল। না পেলে একফোটা আগুন, না পেলে একটা পিণ্ডি, না হ’লো একটা ভূজ্যি উচ্ছুণ্ড্য । গ্রামের লোক একবাক্যে বলিতে লাগিল, তাহাতে আর সন্দেহ কি ! অল্প-পাপ । বাপ রে । এর কি আর প্রায়শ্চিত্ত আছে। বিলাসীর আত্মহত্যার ব্যাপারটাও অনেকের কাছে পরিহাসের বিষয় হইল । আমি প্রায়ই ভাবি, এ অপরাধ হয়ত উহারা উভয়েই করিয়াছিল, কিন্তু মৃত্যুঞ্জয় ত পল্লীগ্রামেরই ছেলে, পাড়াগায়ের তেলে-জলেই ত মাছুষ । তবু এত বড় দুঃসাহসের কাজে প্রবৃত্ত করাইয়াছিল তাহাকে যে বস্তুটী, সেটা কেহ একবার চোখ মেলিয়া দেখিতে পাইল না ? . আমার মনে হয়, যে দেশের নর-নারীর মধ্যে পরস্পরের হৃদয় জয় করিয়া বিবাদ করিবার রীতি নাই, বরঞ্চ তাহা নিন্দার সামগ্ৰী, যে-দেশের নর-নারী আশা করিবার ३***)