পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ষোড়শী

 জীবানন্দ। (নীরবে বহুক্ষণ নিম্পলক চাহিয়া থাকিয়া, ধীরে ধীরে মাথা নাড়িয়া) বোধ হয় পেরেচি। ছেলেবেলায় তোমার নাম অলকা ছিল, না?

 ষোড়শী। (তাহার সমস্ত মুখ উজ্জল হইয়া উঠিল) আমার নাম ষোড়শী। ভৈরবীর দশমহাবিদ্যার নাম ছাড়া আর কোন নাম থাকে না। কিন্তু অলকাকে আপনার মনে আছে?

 জীবানন্দ। (নিরুৎক্ষক-কণ্ঠে) কিছু কিছু মনে আছে বৈ কি! তোমার মায়ের হোটেলে মাঝে মাঝে খেতে যেতাম। তখন তুমি ছোট ছিলে। কিন্তু আমাকে ত তুমি অনায়াসে চিনতে পেরেচ?

 ষোড়শী। অনায়াসে.না হলেও পেরেচি। অলকার মাকে মনে পড়ে?

 জীবানন্দ | পড়ে। তিনি বেঁচে আছেন?

 ষোড়শী। না—বছর-দশেক আগে তার কাশীলাভ হয়েচে। আপনাকে তিনি বড় ভালোবাসতেন, না?

 জীবানন্দ। (উদ্বেগে) হাঁ-একবার বিপদে পড়ে তার কাছে একশ' টাকা ধার নিয়েছিলাম, সেটা বোধ হয় আর শোধ দেওয়া হয়নি।

 ষোড়শী। না, কিন্তু আপনি সেজন্য মনে কোন ক্ষোভ রাখবেন না। কারণ অলকার মা সে টাকা ধার বলে আপনাকে দেননি, জামাইকে যৌতুক বলে দিয়েছিলেন। (ক্ষণকাল চুপ করিয়া) চেষ্টা করলে এটুকু মনেও পড়তে পারে যে, সে দিনটাও ঠিক এমনি দুর্দিন ছিল। আজ ষোড়শীর ঋণটাই খুব ভারী বোধ হচ্চে, কিন্তু সেদিন ছোট অলকার কুলটা মায়ের ঋণটাও কম ভারী ছিল না চৌধুরীমশাই।

 জীবানন্দ। তাই মনে করতে পারতাম যদি না তিনি ঐ কটা টাকার জন্যে তার মেয়েকে বিবাহ করতে আমাকে বাধ্য করতেন।

 ষোড়শী। বিবাহ করতে তিনি বাধ্য করেননি, বরঞ্চ করেছিলেন আপনি নিজে। কিন্তু, যাক ও-সব বিশ্রী আলোচনা। বিবাহ আপনি করেন নি, করেছিলেন শুধু একটু তামাসা। সম্প্রদানের সঙ্গে-সঙ্গেই যে নিরুদ্দেশ হলেন, এই বোধ হয় তার পরে আজ প্রথম দেখা!

 জীবানন্দ। কিন্তু তার পরে ত তোমার সত্যিকারের বিবাহই হয়েচে শুনেচি।

 ষোড়শী। তার মানে আর একজনের সঙ্গে? এই না? কিন্তু নিরুপায় বালিকার ভাগ্যে এ বিড়ম্বন যদি ঘটেই থাকে, তবু ত আপনার সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক নেই।

 জীবানন্দ। নাই থাক, কিন্তু তোমার মা জানতেন শুধু কেবল তোমাকে তোমার বাবার হাত থেকে আলাদা রাখবার জন্যেই তিনি যা হোক একটা—

১৯