পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শরৎ-সাহিত্য-সংগ্রহ

 ষোড়শী। বিবাহের গণ্ডী টেনে দিয়েছিলেন? তা হবেও বা। অলকার মাও বেঁচে নেই, এবং আমিই অলকা কি না, এতকাল পরে তা নিয়েও দুশ্চিন্তা করবার আপনার দরকার নেই।

 জীবানন্দ। (কিছুক্ষণ নীরবে নতমুখে থাকিয়া) কিন্তু, ধর, আসল কথা যদি তুমি প্রকাশ করে বল, তা হলে—

 ষোড়শী। আসল কথাটা কি। বিবাহের কথা? কিন্তু সেই ত মিথ্যে। তা ছাড়া সে সমস্ত অলকার, আমার নয়। সারারাত এখানে কাটিয়ে গিয়ে ও-গল্প করলে ষোড়শীয় সর্ব্বনাশের পরিমাণ তাতে এতটুকু কমবে না।

 জীবানন্দ (কয়েক-মুহূর্ত্ত নীরব থাকিয়া) ষোড়শী, আজ আমি এত নীচে নেবে গেছি যে, গৃহস্থের কুলবধুর দোহাই দিলেও তুমি মনে মনে হাসবে; কিন্তু সেদিন অলকাকে বিবাহ করে বীজগাঁ'র জমিদার বংশের বধূ বলে সমাজের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়াটাই কি ভাল কাজ হতো?

 ষোড়শী। সে ঠিক জানিনে, কিন্তু সত্য কাজ হতো এ জানি! কিন্তু আমি মিথ্যে বকচি, এখন এ-সব আর আপনার কাছে বলা নিষ্ফল। আমি চললুম—আপনি কোনকিছু দেবার চেষ্টা করে আর আমাকে অপমান করবেন না।

[এককড়ির প্রবেশ ]

 জীবানন্দ। (এককড়ি প্রবেশ করিতেই তাহাকে) এককড়ি, তোমাদের এখানে কোন ডাক্তার আছেন? একবার খবর দিয়ে আনতে পার। তিনি যা চাবেন আমি তাই দেব।

 এককড়ি। ডাক্তার আছে বই কি হুজুর—আমাদের বল্লভ ডাক্তারের খাসা হাতযশ। (ষোড়শীর দিকে চাহিল।)

 জীবানন্দ। (ব্যগ্রকণ্ঠে) তাকেই আনতে পাঠাও এককড়ি, আর এক মিনিট দেরি ক’রো না।

 এককড়ি। আমি নিজেই যাচ্চি। কিন্তু হুজুরকে একলা—

 জীবানন্দ। (দুঃসহ বেদনায় মুহূর্তে বিবর্ণ ও উপুড় হইয়া পড়িয়া) উঃ–আর আমি পারিনে।

 ষোড়শী। তুমি বল্লভ ডাক্তারকে ডেকে আনো গে এককড়ি, এখানে যা করবার আমি করব এখন। [এককড়ি ব্যস্তভাবে চলিয়া গেল।]

 জীবানন্দ। (কিছুক্ষণ উপুড় হইয়া থাকিয়া মুখ তুলিয়া) ডাক্তার আসেনি? কতদূরে থাকেন জানো?

20