পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/৩৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ ভোলা উৰ্দ্ধমুখে বোধকরি তাহার দেশের জগবন্ধু স্মরণ করিতেছে এবং শ্ৰীমান্‌ মন্টর চোখ দিয়া জল পড়িতেছে ; ক্ষণকাল শুদ্ধভাবে থাকিয় আমরা আবার গন্তব্যস্থানের অভিমুখেই প্রস্থান করিলাম, কিন্তু সমস্ত পথটায় কাহারও মূখে আর কথা রহিল না। যথাকালে সেবাশ্রমে আসিয়া উপস্থিত হইলাম। অধ্যক্ষ স্বামিজী বেদানঙ্গ আমাদের সানন্দে ও সমাদরে গ্রহণ করিলেন। গরম চা পাইতে কিছুমাত্র বিলম্ব হইল না। কারণ, চাকর না থাকিলেও একজন নূতন দাসী আসিয়াছে। বামুন ঠাকুর কি-একটা অছিলায় দিন-দুই পলাতক ছিল, সেও ভাগ্যক্রমে আজ বিকালে আসিয়া হাজির হইয়াছে। সাতটা কুকুরের কথা ঠিক। একটার ল্যাজেও ঘা আছে বটে। রামভকং ও তায় সত্য, কিন্তু সে কেবল মেয়েদের—পুরুষদের সহিত তাহার খুব ভাব । সুতরাং আমাদের আশঙ্কা নাই। আশ্রমের একজন ব্রহ্মচারী পুরানো ম্যালেরিয়া জরে ভূগিতেছিলেন, কাল তিনি পথ্য পাইবেন । একজন বৈষ্ণবী নবপরিক্রমা হইতে ফিরিবার পথে কলেরায় আক্রান্ত হইয়াছিল, দিন-দুই হইল তাহার শ্ৰীবৃক্ষাবন লাভ হইয়াছে, এ খবর যথার্থ। সমস্ত পশ্চিমাঞ্চলের ন্যায় এ-শহরেও ডেল্প দেখা দিয়াছে, এ-সংবাদও মিথ্যা নয় । অতএব ইমান সুরেশকে দোষ দেওয়া যায় না । শহরের একাস্তে যমুনাতটে পনর-কুড়ি বিধার একখণ্ড ভূমির উপর এই সেবাশ্রম প্রতিষ্টিত। বছর দশ-বার পূৰ্ব্বে এই বাংলাদেশেরই একজন ত্যাগী ও কৰ্ম্মী যুবক কেবলমাত্র নিজের অদম্য শুভেচ্ছাকেই সম্বল করিয়া, এই সেবাশ্রম স্থাপিত করিয়া তাহার ইষ্টদেব ঐশ্রীরামকৃষ্ণ দেবোদেশে উৎসর্গ করিয়াছিলেন। আজ এই প্রতিষ্ঠানটির সহিত আপনাকে তিনি বিচ্ছিন্ন করিয়া লইয়াছেন, কিন্তু ইহার প্রত্যেক ইট ও কাঠের সহিত র্তাহার বিগত দিনের কৰ্ম্ম ও চেষ্টা নিত্য বিজড়িত হুইয়া আছে। র্তাহার সহিত সাক্ষাৎ হইল না, মনে মনে তাহাকে শত ধন্যবাদ দিয়া এই রাত্রেই আবার সকলে মন্দিরাদি দেখিতে বাহির হইয়া পড়িলাম। স্বামিজী আমাদের পথ দেখাইয়া চলিলেন। বৃষ্টি থামিয়াছে, কিন্তু আকাশ তখনও পরিষ্কার হয় নাই । অধিকাংশ মন্দিরের ভিতরের কাজ শেষ হইয়া তখন দ্বার রুদ্ধ হইয়াছে, দেখিবার বিশেষ কিছু নাই । লণ্ঠন লইয়া রাস্ত চলিতে হয়—শ্ৰীকাদায় ও মাঠের ধোয়। শুকনে গোস্থরফলের তিনকোণা প্রকাটায় পথ পরিপূর্ণ, স্বামিজী বারবার করিয়া বলিতে লাগিলেন, তোমরা শ্রাস্ত, আজ থাক,—কিন্তু থাকি কি করিয়া ? শ্ৰীমান মুরেশের বৃন্দাবন-কাহিনী ষে রায় বাহাদুর জলধর সেনের হিমালয়-কাহিনীর মত একেবারে অতথানি সত্য নয়,—এই আনন্দাতিশষ্য ঘরের মধ্যে আজ আবদ্ধ করিয়া রাখি কি দিয়া ? পারিলাম না । জালো হাতে সত্য সত্যই বাহির হইয়া পড়িলাম । veye