হৈম। যে দয়ালু লোকটি তোমাকে সেদিন অন্ধকার রাতে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিলেন, সত্যি বল ত তিনি কে? তাঁকে আমি চিনেচি।
নির্ম্মল। চিনেচ? কে বল ত তিনি?
হৈম। আমাদের ভৈরবী। কিন্তু তুমি তাকে পেলে কোথায়, তাই শুধু আমি ঠাউরে উঠতে পারি নি।
নির্ম্মল। পারোনি? পেয়েছিলাম তাঁকে অনেক দূরে। তোমাদের ফকির সাহেবের সম্বন্ধে অনেক আশ্চর্য্য কথা শুনে ভারী কৌতুহল হয়েছিল তাকে দেখবার। খুঁজে খুঁজে চলে গেলাম। নদীর পারে তাঁর আশ্রম, সেখানে গিয়ে দেখি তোমাদের ভৈরবী আছেন বসে।
হৈম। তার কারণ, ফকিরকে তিনি গুরুর মত ভক্তি-শ্রদ্ধা করেন। কিন্তু সত্যিই কি তোমাকে একেবারে হাত ধরে অন্ধকারে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে গেলেন?
নির্ম্মল। সত্যিই তাই। যে মূহূর্তে তিনি নিশ্চয় বুঝলেন প্রচণ্ড ঝড়-জলের মধ্যে ভয়ঙ্কর অন্ধকার অজানা পথে আমি অন্ধের সমান, নারী হয়েও তিনি অসঙ্কোচে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, আমার হাত ধরে আসুন। কিন্তু পরের জন্য এ-কাজ তুমি পারতে না হৈম।
হৈম। না।
নির্ম্মল। তা জানি। (ক্ষণেক থামিয়া) দেখ হৈম, তোমাদের দেবীর এই ভৈরবীটিকে আমি চিনতে পারিনি সত্যি, কিন্তু এইটুকু নিশ্চয় বুঝেচি এঁর সম্বন্ধে বিচার করার ঠিক সাধারণ নিয়ম খাটে না। হয়, সতীত্ব জিনিসটা এঁর কাছে নিতান্তই বাহুল্য বস্তু-তোমাদের মত তার যথার্থ রূপটা ইনি চেনেন না, না হয়, স্বনাম-দুনাম এঁকে স্পর্শ পর্য্যন্তও করতে পারে না।
হৈম। তুমি কি সেদিনের জমিদারের ঘটনা মনে করেই এই-সব বলচ?
নির্ম্মল। আশ্চর্য্য নয়। শাস্ত্রে বলে সাত পা একসঙ্গে গেলেই বন্ধুত্ব হয়। অতবড় পথটায় ওই দুর্ভেদ্য আঁধারে একমাত্র তাঁকেই আশ্রয় করে অনেক পা গুটি গুটি একসঙ্গে গেলাম, একটি একটি করে অনেক প্রশ্নই তীকে জিজ্ঞাসা করলাম, কিন্তু পূর্ব্বেও যে রহস্যে ঢাকা ছিলেন পরেও ঠিক তেমনি রহস্যেই গা-ঢাকা দিয়ে মিলিয়ে গেলেন–কিছুই তাঁর হদিস পেলাম না।