পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ষোড়শী

 হৈম। তোমার জেরাও মানলেন না, বন্ধুত্বও স্বীকার করলেন না?

 নির্ম্মল। না গো, না, কোনটাই না।

 হৈম। (হাসিয়া ফেলিয়া) একটুও না? তোমার দিক থেকেও না?

 নির্ম্মল। এতবড় কথাটা কেবল ফাঁকি দিয়েই বার করে নিতে চাও নাকি? কিন্তু নিজেকে জানতে যে দেরি লাগে হৈম।

 হৈম। দেরি লাগুক তবু পুরুষের হয়। কিন্তু মেয়েমানুষের এমনি অভিশাপ, আমরণ নিজের অদৃষ্ট বুঝতেই তার কেটে যায়।

 নির্ম্মল। (হৈমর হাত ধরিয়া) তুমি কি পাগল হয়েচ হৈম? চল, আমরা একটু তাড়াতাড়ি যাই, হয়ত পূজোর বিলম্ব হয়ে যাবে।

[ উভয়ে প্রস্থান ]
চতুর্থ দৃশ্য
নাটমন্দির
[ গড়চণ্ডীর মন্দির ও সংলগ্ন প্রশস্ত অলিন্দ। সম্মুখে দীর্ঘ প্রাকার-বেষ্টিত বিস্তীর্ণ প্রাঙ্গণ। প্রাঙ্গণে নাটমন্দিরের কিয়দংশ দেখা যাইতেছে। মন্দিরের দ্বার উন্মুক্ত। দক্ষিণদিকে প্রাঙ্গণে প্রবেশ করিবার পথ। সকালের কাঁচা রোদের আলো চারিদিকে পড়িয়াছে; মন্দিরের অলিন্দে ও প্রাঙ্গণে উপস্থিত জনার্দ্দন রায়, শিরোমণি ঠাকুর, নির্ম্মল বসু, ষোড়শী, হৈম এবং আরও কয়েকজন নর-নারী। ]

 শিরোমণি। (ষোড়শীকে) আজ হৈমবতী তাঁর পুত্রের কল্যাণে যে পূজা ' দিতেছেন তাতে তোমার কোন অধিকার থাকবে না, তাঁর এই সঙ্কল্প তিনি আমাদের জানিয়েচেন। তাঁর আশঙ্কা তোমাকে দিয়ে তার কার্য্য সুসিদ্ধ হবে না।

 ষোড়শী। (পাণ্ডুর মুখে) বেশ, তাঁর কাজ যাতে স্বসিদ্ধ হয় তিনি তাই করুন।

 শিরোমণি। কেবল এইটুকুই ত নয়। আমরা গ্রামস্থ ভদ্রমণ্ডলী আজ স্থির-সিদ্ধান্ত উপস্থিত হয়েচি যে, দেবীর কাজ আর তোমাকে দিয়ে হবে না। মায়ের ভৈরবী তোমাকে রাখলে আর চলবে না। কে আছ, একবার, তারাদাস ঠাকুরকে ডাক ত।

২৯