পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শরৎ-সাহিত্য-সংগ্রহ



[একজন ডাকিতে গেল। ]

 ষোড়শী। কেন চলবে না?

 জনৈক ব্যক্তি। সে তোমার বাবার মুখেই শুনতে পাবে।

 জনার্দ্দন। আগামী চৈত্রসংক্রান্তিতে নতুন ভৈরবীর অভিষেক হবে, আমরা স্থির করেচি।

[তারাদাস একটি দশ বছরের মেয়ে সঙ্গে করিয়া প্রবেশ করিল। ]

 হৈম। (তারাদাসের দিকে চাহিয়া) যা সমস্ত শুনচি বাবা, তাতে কি ওঁর কথাই সত্যি বলে মেনে নিতে হবে?

 জনার্দ্দন। নয়ই বা কেন শুনি?

 হৈম। (ছোট মেয়েটিকে দেখাইয়া) ঐটিকে যখন উনি যোগাড় করে এনেচেন তখন মিথ্যে বলা কি ওঁর এতই অসম্ভব? তা ছাড়া সত্যি মিথ্যে ত যাচাই করতে হয় বাবা, ও ত একতরফ রায় দেওয়া চলে না।

[সকলেই বিস্মিত হইল ]

 শিরোমণি। (স্মিতহাস্তে) বেটি কৌসুলীর গিন্নী কিনা, তাই জেরা ধরেচে! আচ্ছা, আমি দিচ্চি থামিয়ে। (হৈমকে) এটা দেবীর মন্দির–পীঠস্থান। বলি এটা ত মানিস?

 হৈম। (ঘাড় নাড়িয়া) মানি বৈকি।

 শিরোমণি। তা যদি হয়, তা হলে তারাদাস বামুনের ছেলে হয়ে কি দেবমন্দিরে দাঁড়িয়ে মিছে-কথা কইচে পাগলী? (প্রবল হাস্য করিলেন।)

 হৈম। আপনি নিজেও ত তাই শিরোমণিমশাই। অথচ এই দেবমন্দিরে দাড়িয়েই ত মিছে-কথার বৃষ্টি করে গেলেন। আমি ত একবারও বলিনি ওঁকে দিয়ে কাজ করালে আমার সিদ্ধ হবে না।

[শিরোমণি হতবুদ্ধির মত হইলেন।]

 জনার্দ্দন। (কুপিত হইয়। তীক্ষকণ্ঠে) বলনি কি-রকম?

 হৈম। না বাবা, বলিনি। বলা দূরে থাক, ও-কথা আমি মনেও করিনে। বরঞ্চ ওঁকে দিয়েই আমি পুজো করাব, এতে ছেলের আমার কল্যাণই হোক, আর অকল্যাণই হোক। (ষোড়শীর প্রতি) চলুন মন্দিরের মধ্যে—আমাদের সময় বয়ে যাচ্ছে —

 জনার্দ্দন। (ধৈর্য্য হারাইয়া অকস্মাৎ উঠিয়া দাড়াইয়া ভীষণ-কণ্ঠে) কখখনো না, আমি বেঁচে থাকতে ওকে কিছুতেই মন্দিরে ঢুকতে দেব না। তারাদাস, বল ত ওর মায়ের কথাটা। একবার শুনুক সবাই!

৩০