পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শরৎ-সাহিত্য-সংগ্রহ

 জনার্দ্দন। আমার পরম সৌভাগ্য যে আপনি এসেচেন। আজ আমার দৌহিত্রের কল্যাণে মায়ের পূজা দেওয়া হচ্চে।

 জীবানন্দ। বটে! তাই বুঝি বাইরে এত জন-সমাগম?

[ জনার্দ্দন সবিনয়ে মুখ নত করিলেন। ]

 শিরোমণি। হুজুরের দেহটি ভাল আছে?

 জীবানন্দ। দেহ? (হাসিয়া) হাঁ, ভালই আছে। তাই ত আজ হঠাৎ বেরিয়ে পড়লাম। দেখি, বহুলোকে ভীড় করে এইদিকে আসচে। সঙ্গ নিলাম। অদৃষ্ট প্রসন্ন ছিল, দেবতা ব্রাহ্মণ এবং সাধুসঙ্গ তিনটেই বরাতে জুটে গেল। কিন্তু রায়মশায়কেই জানি, আপনাকে ত বেশ চিনতে পালাম না ঠাকুর?

 জনার্দ্দন। ইনি সর্ব্বেশ্বর শিরোমণি। প্রাচীন নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ। গ্রামের মাথা বললেই হয়।

 জীবানন্দ। বটে? বেশ, বেশ, বড় আনন্দ লাভ করলাম। তা এইখানেই একটু বসা যাক না কেন?

[বসিতে উদ্যত হইলে সকলেই ব্যস্ত হইয়া উঠিল। ]

 শিরোমণি। (চীৎকার করিয়া) আসন, আসন, বসবার একটা আসন নিয়ে এস কেউ—

 জীবানন্দ। ব্যস্ত হবেন না শিরোমণিমশাই, আমি অতিশয় বিনয়ী লোক। সময়-বিশেষে রাস্তায় শুয়ে পড়তেও অভিমান বোধ করিনে—এ ত ঠাকুরবাড়ি। বেশ বসা যাবে।

[ জীবানন্দ উপবেশন করিলেন। ]

 জনার্দ্দন। একটা গুরুতর কার্য্যোপলক্ষে আমরা সবাই আপনার কাছে যাব স্থির করেছিলাম, শুধু আপনি পীড়িত মনে করেই যেতে পারিনি।

 জীবানন্দ। গুরুতর কার্ধ্যোপলক্ষ্যে?

 শিরোমণি। হুঁ হুজুর, গুরুতর বই কি। ষোড়শী ভৈরবীকে আমরা কেউ চাইনে।

 জীবানন্দ। চান না?

 শিরোমণি। না, হুজুর।

 জীবানন্দ। একটুখানি জনশ্রুতি আমার কানেতেও পৌঁছেচে। ভৈরবীর বিরুদ্ধে আপনাদের নালিশটা কি শুনি?

[সকলেই নীরব রহিল ]

 জীবানন্দ। বলতে কি আপনাদের করুণা বোধ হচ্ছে?

৩২