পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষোড়শী পথিক । ( মাথা নাড়িয়া ) এই ফান্ধনে পরিবার মারা গেল, একে একে দুই ছেলে ওলাউঠায় চোখের সামনে মারা গেল বাৰু, একফোটা ওষুধ কাউকে দিতে পারলাম না। বলিতে বলিতে লোকটি উচ্ছসিত শোকে কাদিয়া ফেলিল। জীবানন্দ জামার হাতায় চোখ মুছিতে লাগিলেন । ] পথিক। মনে মনে বললাম, আর কেন ? ভাঙা কুঁড়েখানি বিধবা ভাইঝিকে দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম—বাবু, আমার চেয়ে দুঃখী আর সংসারে নেই। জীবানন্দ । ওরে ভাই, সংসারটা ঢের বড় জায়গা, এর কোথায় কে কিভাবে আছে বলবার যে নেই। পথিক । কিন্তু আমার মত— জীবানন্দ । দুঃখী ? কিন্তু দুঃখীদের কোন আলাদা জাত নেই দাদা, দুঃখেরও কোন বাধানে রাস্তা নেই। তা হলে সবাই তাকে এড়িয়ে চলতে পারত। হুড়মুড় করে যখন ঘাড়ে এসে পড়ে তখনই কেবল মানুষে টের পায়। আমার সব কথা তুমি বুঝবে না ভাই, কিন্তু সংসারে তুমি একলা নও। অন্ততঃ একজন সাখী তোমার বড় কাছেই আছে, তাকে তুমি চিনতেও পারেনি। কিন্তু তুমি মায়ের নাম করছিলে— * সহসা সাগর ও হরিহর দ্রুতপদে প্রবেশ করিয়া মন্দিরের সম্মুখে গিয়া দাড়াইল । জীবানন্দ উৎকর্ণ হইয়া শুনিতে লাগিলেন । ] হরিহর । আমাদের মায়ের সৰ্ব্বনাশ যে করেচে তার সৰ্ব্বনাশ না করে আমরা কিছুতে ছাড়ব না । সাগর। মায়ের চৌকাঠ ছয়ে দিব্যি করলাম খুড়ো, ফাসি যেতে হয় তাও যাব। হরিহর । হ: —আমাদের আবার জেল, আমাদের আবার ফাসি ! মা আগে যাক— হরিহর ও সাগর। জয় মা চণ্ডী ! [ উভয়ের প্রস্থান ] জীবানন্দ । বাস্তবিক, ঠাকুর-দেবতার মত এমন সহৃদয় শ্রোতা আর নেই। হোক না মিথ্যা দন্ত, তবু তার দাম আছে। দুৰ্ব্বলের ব্যর্থ পৌরুষ তবু একটু গৌরবের স্বাদ পায় । & পথিক । কি বললেন বাৰু? জীবানন্দ । কিছু না ভাই, মায়ের নাম করছিলে আমি বাধা দিলাম। আবার শুরু কর, আমি চললাম। কাল এমনি সময়ে হয়ত আবার দেখা পাবে। קף