পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/১১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

র্তাহার প্রায়ই অযথা বিলম্ব ঘটা যাইত। কিন্তু মেয়ের প্রশ্নের উত্তরে কি যে তাহার বলা উচিত তাহা ভাবিয়া পাইলেন না। - জবাব না পাইয়া বেণু বলিতে লাগিল, কিন্তু আমার নতুন-মার বেলা সইতে না, খেতে একটু দেরি হলেই তিনি ভয়ানক রেগে যেতেন। বাবা তাই আমাকে একদিন দুঃখ করে বলেছিলেন যে, দেশের বাড়িতে কতদিন যে আপনার এ-বেলা খাওয়া হোতো না, উপোস করে কাটাতে হোতে তার সংখ্যা নাই, কিন্তু কোনদিন রাগ করে বলেননি ঠাকুর বিলিয়ে দিতে । +. সারদা আশ্চৰ্য্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, তিনি কি ঠাকুর বিলিয়ে দিতে বলেন নাকি ? - ই, কতদিন । বলেন গঙ্গায় ফেলে দিয়ে আসতে । তোমার বাবা কি বলেন ? সারদার প্রশ্নের উত্তর সে মাকেই দিল, বলিল, আমার বয়স তখন ন’বচ্ছর । বাবা ডেকে পাঠালেন, তার ঘরে গিয়ে দেখি তার চোখ দিয়ে জল পড়চে । আমাকে কাছে বসিয়ে আদর করে বললেন, আমার গোবিন্দর সব ভার ছিল একদিন তোমার মায়ের। আজ থেকে তুমিই তার কাজ করবে-পারবে তো মা ? বললুম, পারবো বাবা। তখন থেকে আমিই ঠাকুরের কাজ করি। পূজে না হওয়া পৰ্য্যন্ত আমি বাড়িতে ন-খেয়ে থাকি ; কিন্তু আজ থাকতুম না মা । জরের ভয় না থাকলে আপনাকে বসিয়ে রেখে আমরা সবাই মিলে আজ খেয়ে নিতুম। এই বলিয়া সে হাসিতে লাগিল, ভাবিয়াও দেখিল না ইহা কতদূর অসম্ভব এবং কি মৰ্ম্মাস্তিক আঘাতই তাহার মাকে করিল। সবিতা আর একদিকে চাহিয়া নীরবে বসিয়া রহিলেন, একটা কথারও উত্তর দিলেন না। মেয়ে যাহাই বলুক, মা জানেন এ গৃহের আর তিনি কেহ নহেন, পারিবারিক নিয়ম-পালনে আজ র্তাহার খাওয়া-না-খাওয়া সম্পূর্ণ অর্থহীন। রেণু সায়দাকে ঠাকুর দেখাইতে লইয়া গেল। সবিতা দেইখানে চুপ করিয়া বসিয়া রহিলেন । মেয়েট কতটুকুই বা বলিয়াছে! তাহার বিমাতার উত্ত্যক্ত-চিত্তের সামান্ত একটুখানি বিবরণ, ঠাকুর-দেবতায় হতশ্রদ্ধার-তুচ্ছ একটা উদাহরণ। এই তো ! এমন কত ঘরেই ত আছে। অভাবিতও নয়, হয়তো বিশেষ দোষেরও নয়, তথাপি এই সামান্ত বস্তুটাই তাহার কল্পনায় বারো বছরের অজানা ইতিহাস চক্ষের পলকে দাগিয়া দিয়া গেল। এই স্ত্রীলোকটিই হয়তো ডাহার স্বামীকে একটা মূহূর্তের জন্যও বুঝে নাই, তাহার কতদিনের কত মুখভার, চাপা-কলহ, কত ছোট ছোট সংঘর্ষের কাটায় অনুবিন্ধ শাস্তহীন দিন, কত বেদন বিক্ষত দুঃখময় স্থতি—এমনি করিয়াই এই স্নেহ-শ্রদ্ধা হীন, কোপনস্বভাব নারীর একান্ত সন্নিধ্যে ও শাসনে এই দুটি প্রাণী র

  • eve