পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/১১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় সত্যিই বড় ক্লাস্ত নতুন-বোঁ, সত্যিই আর পারবো না। কত যে ক্লাস্ত সে তুমি ছাড়া আর কেউ বুঝবে না ; তারা বলবে আলস্ত, বলবে জড়ত, ভাববে আমার নিরাশার হাহুতাশ । তারা তর্ক করবে, যুক্তি দেবে, মেরে মেরে এখনো ছোটাতে চাইবে—তারা এই কথাটাই কেবল জেনে রেখেচে যে, কলে দম দিলেই চলে ! কিন্তু তারও যে শেষ আছে এ তারা বিশ্বাস করতে পারে না । আমি বিশ্বাস করলে তুমি খুশী হবে ? খুশী হবো কি না জানিনে, কিন্তু শাস্তি পাবো । কি এখন করবে ? রেণুকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি যাব । সেখানে সব গিয়েও যা বাকী থাকবে তাতে কোনমতে আমাদের দিনপাত হবে । আর যারা আমাদের ত্যাগ করে কলকাতায় রইলো তাদের ভাবনা নেই, সে তো তুমি আগেই শুনেচে । রেণুর ভার কাকে দিয়ে যাবে মেজকর্তা ? দিয়ে যাবো ভগবানকে । তার চেয়ে বড় আশ্রয় আর নেই, সে আমি জেনেচি । সবিতা স্তব্ধভাবে বসিয়া রহিলেন । ভগবানে তাহার অবিশ্বাস নাই, কিন্তু নিজের মেয়ের সম্বন্ধে অতবড় নির্ভরতায় নিশ্চিন্ত হইতেও পারেন না। শঙ্কায় বুকের ভিতরটায় তোলপাড় করিয়া উঠিল ; কিন্তু ইহার উত্তর যে কি তাহাও ভাবিয়া পাইলেন না। শুধু যে-কথাটা তাহার মনের মধ্যে অহরহ কঁাটার মত বিধিতেছিল তাহাই মুখে আসিয়া পড়িল, বলিলেন, মেজকৰ্ত্তা, আমাকে টাকাটা ফিরিয়ে দিলে কি আমার অপরাধের দণ্ড দিতে? প্রতিশোধের আর কি কোন পথ খুজে পেলে না ? ব্ৰজবাবু কহিলেন, না হয় তুমিই নিজে পথ বলে দাও ? আমাদের রতন খুড়ে ও রতন খুড়ির কথা তোমার মনে আছে ? সে অবস্থায় রাজি আছ ? এত দুঃখেও সবিতা হাসিয়া ফেলিলেন, সলজে কহিলেন, ছিছি, কি কথা তুমি বলে । ব্ৰজবাৰু কহিলেন, তবে কি করতে বলে ? নতুন-বোঁ গয়না চুরি করে পালিয়েছে বলে পুলিশে ধরিয়ে দেবো , প্রস্তাবটা এত হাস্যকর যে বলামাত্রই দুজনে হাসিয়া ফেলিলেন । সবিতা বলিলেন, তোমার যত সব উদ্ভট কল্পনা ? বহুদিন পরে উভয়ের রহস্তোজ্জল একটুমাত্র হাসির কিরণে ঘরের ওমোট অন্ধকার যেন অনেকখানি কাটিয়া গেল । ব্ৰজবাবু বলিলেন, শাস্তির বিধান সকলের এক নয় নতুন-বোঁ । দও দিতেই যদি হয় তোমাকে আর কি দিতে পারি? যেদিন রাত্রে তোমার নিজের সংসার পায়ে ঠেলে চলে গেলে, সেদিনই আমি স্থির করেছিলাম, আবার যদি কখনো দেখা হয়, তোমার যা-কিছু পড়ে রইলো ফিরিয়ে দিয়ে আমি অঞ্চণী হবো । S a "