পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ সবিতার বিদ্যুদ্বেগে মনে পড়িল স্বামীর একটা কথা যাহা তিনি তখন প্রায়ই বলিতেন। বলিতেন, ঋণ রেখে মরতে নেই নতুন-বোঁ, সে পরজন্মে এসেও দাবী করে। এই তার ভয় । কোন স্থত্রেই আর যেন না উভয়ের দেখা হয়—সকল সম্বন্ধ যেন এইখানেই চিরদিনের মত বিচ্ছিন্ন হইয়া যায়। কহিলেন, আমি বুঝেচি মেজকৰ্ত্ত । ইহ-পরকালে আর যেন না তোমার ওপর আমার কোন দাবী থাকে । সমস্তই যেন নিঃশেষ হয়—এই তো ? - ব্ৰজবাবু মৌন হইয়া রহিলেন এবং যে-আঁধার এইমাত্র ঈষৎ অপস্থত হইয়াছিল, সে আবার এই মৌনতার মধ্যে দিয়া সহস্ৰ-গুণ হইয়া ফিরিয়া আসিল । স্বামীর মুখের প্রতি আর তিনি চাহিয়া দেখিতে পারিলেন না, নতনেত্রে মুম্বুকণ্ঠে প্রশ্ন করিলেন, তোমরা কবে বাড়ি যাবে মেজকৰ্ত্তা ? যত শীঘ্ৰ পারি। এখন যাই তবে ? এসো । সবিতা উঠিয়া দাড়াইলেন, বুঝলেন সব শেষ হইয়াছে। সেই ভূমিকম্পনের রাতে রসাতলের গর্ভ চিরিয়া যে পাষাণ-কূপ উৰ্দ্ধোংক্ষিপ্ত হইয়া উভয়ের মাঝখানে দুর্লঙ্ঘ্য ব্যবধান স্বষ্টি করিয়াছিল, আজও তেমনি অক্ষয় হইয়াই আছে, তাহার তিলাৰ্দ্ধ ও নষ্ট হয় নাই। এই নিরীহ শান্ত মানুষটি যে এত কঠিন হইতে পারে, আজিকার পূৰ্ব্বে এ-কথা তিনি কবে ভাবিয়াছিলেন । ঘরের বাহিরে পা বাড়াইয়াই সবিতা সহসা থমকিয় দাড়াইলেন, বলিলেন, মুক্তি পাবে না মেজকর্তা । তুমি বৈষ্ণব, কত মানুষের কত অপরাধই তুমি জীবনে ক্ষমা করেচো, কিন্তু আমাকে পারলে না। এ ঋণ তোমার রইলো। একদিন হয়তো ত৷ জানতে পারবে । ব্ৰজবাৰু তেমনি স্তব্ধ হইয়াই রহিলেন। সন্ধ্যা হয় । যাইবার সময় রেণু তাহাকে প্রণাম করিল, কিন্তু কিছু বলিল না। এই নীরবতার মন্ত্র সেও হয়তে তাহার পিতার কাছেই শিথিয়াছে। সারদাকে সঙ্গে লইয়া সবিতা বাহিরে আসিলেন । গাড়িতে উঠিয়াই চোখে পড়িল রাখাল তারককে লইয়া দ্রুতপদে এইদিকেই আসিতেছে। তারক বলিল, নতুন-ম, একবার নেমে দাড়াতে হবে যে, আমি প্রণাম করবো । কথা কহা কঠিন, সবিতা ইঙ্গিতে উভয়কে গাড়িতে উঠিতে বলিয়া কোনমতে শুধু বলিলেন, এসে বাবা, আমার সঙ্গে তোমরা বাড়ি চলো । } •kr