পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ তারকের পরিচয় পরে হইবে, কিন্তু রাখালের ইতিহাসটা মোটামুটি এইখানে বলিয়া রাখি । কিন্তু ওকে জিজ্ঞাসা করিলেই বলে, আমি তো সন্ন্যাসী-মানুষ হে। অর্থাৎ, মাতৃ-পিতৃকুলের সবাই গেছেন লোকাস্তরে সে-ই শুধু বাকী। ইহলোক সমুজ্জল করিয়া একদিন তাহারা ছিলেন নিশ্চয়ই, কিন্তু সে-সব খবর রাখাল ভালো জানে না। যদি বা কিছু জানে, বলিতে চায় না। অধুনা পটলডাঙ্গায় তাহার বাসা। বাড়ি-আলা বলে দু’খানা ঘর, সে বলে একখানা। ভাড়ার দিক দিয়া শেষ পর্য্যন্ত দেড়খানার দরে রফা হইয়াছে। একতালা, স্বতরাং যথেষ্ট স্তাতসেঁতে । তবে হাওয়া না থাকিলেও আলোটা আছে—দিনে দেশলাই জালিয়া জুতা খুজিয়া ফিরিতে হয় না। ঘর যাই হোক, রাখালের আসবাবের অভাব নাই । ভালো খাট, ভালো বিছানা, ভালো টেবিল, চেয়ার, ভালো দুটি আলমারি—একটা বইয়ের, অন্যটা কাপড়-জামা-পোষাকে পরিপূর্ণ। একটা দামী ইলেকট্রিক ফ্যান, দেওয়াল ঘড়িটাও নেহাৎ কম মূল্যের নয়—এমন আরো কত কি সৌধীন ছোট-খাটে টুকি-টাকি জিনিস । একজন ঠিক বুড়ি-ঝি রাখালের কুকার, চায়ের সাজ-সরঞ্জাম মাজিয়া-ঘষিয়া দিয়া যায়, ঘর-দ্বার পরিষ্কার করে, ভিজা কাপড় কাচিয়া শুকাইয়া তুলিয়া দিয়া যায়, সময় পাইলে বাজার করিয়াও আনে। রাখাল পাল-পাৰ্ব্বণের নাম করিয়া টাকাটা সিকিট যাহা দেয় তাহা বহু সময়ে মাস-মাহিনাকে অতিক্রম করে । রাখাল মাঝে মাঝে আদর করিয়া ডাকে নানী ৷ রাখালকে সে সত্যই ভালবাসে । রাখাল সকালে ছেলে পড়ায়, বাকী সমস্তদিন সভা-সমিতি করিয়া বেড়ায় । রাজনীতিক নয়, সামাজিক । সে বলে, সে সাহিত্যিক—রাজনীতির গণ্ডগোলে তাহাদের সাধনায় বিঘ্ন ঘটে। ছেলে পড়ায়, কিন্তু কলেজের নয়—স্থলের। তাও খুব নীচের ক্লাসের। পূৰ্ব্বে চাকুরির চেষ্টা অনেক করিয়াছে, কিন্তু জুটাইতে পারে নাই। এখন সে চেষ্টা ছাড়িয়াছে। কিন্তু একবেলা ছোট ছেলে পড়াইয়া কি করিয়া যে এতটা সুখ-স্বাচ্ছদ্য সম্ভবপর তাহাও বুঝা যায় না। সে সাহিত্যিক, কিন্তু প্রচলিত সাপ্তাহিক বা মাসিক পত্রে তাহার নাম খুজিয়া মেলে না। রাত্রে অনেক রাত্রি জাগিয়া খাতা লেখে, কিন্তু সেগুলো যে কি করে কাহাকেও বলে না। ইস্কুলে-কলেজে সে কি পাশ করিয়াছে কেহ জানে না, প্রশ্ন করিলে এমন একটা ভাব ধারণ করে যে, সে গুরু-ট্রেনিং হইতে ডক্টরেট পর্য্যন্ত যা-কিছু হইতে পারে। তাহার আলমারিতে সকল জাতীয় পুস্তক । কাব্য, সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান—মোটা মোট বাছা বাছা বই । কথাবার্তা শুনিলে হঠাৎ বর্ণচোরা মহামহোপাধ্যায় বলিয়া শঙ্কা হয়। হোমিওপ্যাধি শাস্ত্র হইতে wire रे