পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/১৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় সেদিন বিমলবাবু ছিলেন সামান্ত-পরিচিত আমন্বিত অতিথি, উারই সম্মাননার উদ্দেশ্যে ছিল আনন্ম-অনুষ্ঠান। রমণীবাবু এলেন ঘরের মধ্যে তেড়ে -বললেন, চলে৷ সভায়। মা বললেন, না, আমি অনুস্থ । তিনি বললেন, বিমলবাবু কোটপতি ধনী, তিনি আমার মনিব, নিজে আসবেন এই ঘরে দেখা করতে। মা বললেন, না, সে হবে না। এতে অতিথির কত যে অসম্মান লে-কথা মা না জানতেন তা নয়, কিন্তু অনুশোচনায়, ব্যথায়, অন্তরের গোপন ধিক্কারে তখন মুখ দেখানে ছিল বোধ করি অসম্ভব। কিন্তু দেখাতে হোলো। বিমলবাবু নিজে এসে ঢুকলেন ঘরে। প্রশান্ত সৌম্য মূৰ্ত্তি, কথাগুলি মৃদ্ধ, বললেন, অনধিকার-প্রবেশে অস্কার হোলো বুৰি, কিন্তু যাবার আগে না এসেও পারলাম না। কেমন আছেন বলুন ? মা বললেন, ভালো আছি। তিনি বললেন, ওটা রাগের কৰা, ভালো আপনি নেই। কিছুকাল আগে ছবি আপনার দেখেচি, আর আজ দেখচি সশরীরে। কত ষে প্রভেদ সে আমি বুঝি। এ চলতে পারে না, শরীর ভালো আপনাকে করতেই হবে। যাবেন একবার সিঙ্গাপুরে ? সেখানে আমি থাকি –সমূত্রের কাছাকাছি একটা বাড়ি আছে আমার। হাওয়ার শেষ নেই, আলোরও সীমা নেই। পূর্কের দেহ আবার ফিরে আসবে-চলুন। মা শুধু জবাব দিলেন, না। না কেন ? প্রার্থনা আমার রাখবেন না ? মা চুপ করে রইলেন। যাবার উপায় তো নেই, মেয়ে যে পীড়িত, স্বামী যে গৃহহীন। সেদিন রমণীবাবু ছিলেন মদ খেয়ে অপ্রকৃতিস্থ, জলে উঠে বললেন, যেতেই হবে । আমি হুকুম করচি যেতে হবে তোমাকে। না, আমি যেতে পারবো না। তার পরে গুরু হোলো অপমান আর কটু কথার ঝড় ! সে-ষে কত কটু আমি বলতে পারবো না দেবতা। ঘূর্ণি হাওয়ায় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে জড়ো করে তুললে যেখানে যত ছিল নোঙরামির আবর্জনা—প্রকাশ পেতে দেরি হলো না যে, মা ও-লোকটার স্ত্রী নয়—রক্ষিতা। সতীর মুখোস পরে ছদ্মবেশে রয়েচে শুধু একটা গণিকা। তখন আমি একপাশে দাড়িয়ে, নিজের কথা মনে করে ভাবলুম, পৃথিবী দ্বিধা হও । মেয়েদের এ-যে এতবড় দুৰ্গতি তার আগে কে জানতো দেবতা । রাখাল নিম্পলক-চক্ষে এতক্ষণ তাহার প্রতি চাহিয়াছিল, এবার ক্ষণিকের জন্য একবার চোখ ফিরাইল । সারা বলিতে লাগিল, মা স্তৰ হয়ে বসে রইলেন যেন পাথরের মূৰ্ত্তি । রমণীবাবু টেচিয়ে উঠলেন, যাবে কিনা বলে ? ভাবচো কি বলে ? * סאסאל