পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/১৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ চিরদিন কেউ ভুল করতে পারে না সারদা। আজ না বৃন্ধুক মা, একদিন সকলেই ; তোমাকে বুঝতে পারবে । সারদার চোখে জল আসিয়া পড়িয়াছিল, কি যেন বলিতে গিয়াও বলিতে পারিল না। অবনত-মুখে প্রবল চেষ্টায় নিঃশবো অশ্রসংবরণ করিতে লাগিল । সবিতা সারাকে কাছে টানিয়া লইয়া বলিলেন, তোমাকে কিছু বলতে হবে না সারদা। আমার সঙ্গে না যেতে পারা তোমার যে কতবড় দুঃখ, আমি তা জানি। ট্রেন ছাড়িবার ঘন্ট-দেড়েক পূৰ্ব্বে তারক স্টেশনে সবিতাকে লইয়া উপস্থিত হইল। মালপত্র গনিয়া, কুলি ঠিক করিয়া, পুরাতন দরওয়ান মহাদেবের হেফাজতে দেওয়া হইয়াছে । ব্রেকভ্যানের মালগুলি ওজনাস্তে রেলওয়ে কোম্পানীর দায়িত্বে অর্পণ করিয়া রসিদধানি সযত্নে পকেটে পুরিয়া তারক নিশ্চিন্ত-চিত্তে সেকেও ক্লাশ লেডিল ওরেটিং রুমের সামনে আসিয়া ডাকিল, নতুন-মা— সবিতা ঘরের ভিতর হইতে দরজার সামনে আসিয়া দাড়াইলেন। তারক রুমাল দিয়া কপালের ঘাম মুছিতে মুছিতে বলিল, মালপত্র ওজন করে ব্রেকে দিয়ে রসিদ নিয়ে এলাম। এধারের ঝামেলা চুকলো। এখন ট্রেনটা প্ল্যাটফর্মে ঢুকলেই হয় । আপনাকে বিছানা পেতে বসিয়ে দিতে পারলে তবে নিশ্চিন্ত হওয়া যাবে। সবিতা মৃদ্ধ হাসিয়া বলিলেন, নতুন-মার পাছে হরিণপুরে যাওয়া না হয়, এজন্তে তোমার ভয় আর ভাবনার অন্ত নেই, না তারক ? স্মিতমুখে তারক জবাব ছিল, নিশ্চয়ই। যে পৰ্য্যস্ত না ছেলের কুঁড়ে ঘরে মায়ের পায়ের ধূলো পড়চে, ততক্ষণ নিজের ভাগ্যকে বিশ্বাস করিনে মা ! ছাড়িবার নির্দিষ্ট সময়ের আধঘণ্ট। পূৰ্ব্বে ট্রেন প্ল্যাটফর্মের ভিতরে আসিয়া দাড়াইল । ব্যতিব্যস্তভাবে তারক ওয়েটং-রুমের দ্বারে আসিয়া উচ্চকণ্ঠে ডাকিল, নতুন-ম, বেরিয়ে আসুন ট্রেন এসে গেছে। মহাদেব দরওয়ান ওয়েটিং রুমের বাহিরে কতকগুলি বাক্স-বিছানার বাণ্ডিলের উপর বসিয়া খৈনি টিপিতেছিল। তাড়াতাড়ি থৈনি মুখে ফেলিয়া পাগড়ী ঠিক করিতে করিতে শশব্যন্তে প্রস্তুত হইয়া দাড়াইল । আপাদমস্তক সিদ্ধের চার-মণ্ডিতা সবিতা শিবুর মা কি-সহ ট্রেন অভিমুখে তারকের অনুসরণ করিতে করিতে বলিলেন, আমাকে তুমি ইন্টার ক্লাশে মেয়েদের কামরায় তুলে দিও তারক। শিবুর মাও আমার সঙ্গে থাকবে। তারক থমকিয়া দাড়াইয়া বলিল, আমি আপনার জন্তে লেকেও ক্লাশের টিকিট

  • to