পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/১৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰন্থ সারদার সমতুল্য কি আর একটি মেয়েরও জীবনে দেখা পাইয়াছে ? জীবনদানের মূল্যে এমন করিয়া নিঃশব্দে জীবন উৎসর্গ আর কে করিতে পারে ? ধোওয়া বাসনগুলি আনিয়া তাকের উপরে সাজাইয়া রাখিতে রাখিতে সারদা বলিল, প্রথম ষেদিন আমার ঘরে পায়ের ধূলে দিয়েছিলেন দেবতা, আপনাকে চা তৈরী করে খাওয়াতে চেয়েছিলাম। আপনি বলেছিলেন, অসময়ে চা খাওয়া আমার সহ হয় না। জলখাবার আনিয়ে দিতে চেয়েছিলাম, আমার আগ্রহ দেখে আপনার দয়া হয়েছিল। বলেছিলেন, আবার যেদিন সময় পাবো, আমি নিজে চেয়ে তোমার চা, তোমার জলখাবার খেয়ে যাবো ; সেই থেকে আমি চায়ের সরঞ্জাম ঘরে যোগাড় করে রেখে দিয়েচি। জানতাম একদিন না একদিন আপনি এই ঘরে বসে আমার হাতের চা জলখাবার গ্রহণ করবেনই । কিন্তু বলেছিলেন নিজে চেয়ে নিয়ে থাবো । আমার ভাগ্যে সেটা আর হ’লো না । রাখাল স্তন্ধ হইয়া বসিয়া রহিল। মনে পড়িল সে আজ বাসা হইতে বাহির হইয়াছিল চা জলখাবার খাইবে বলিয়াই । অনেকক্ষণ নিঃশব্দে কাটিয়া গেল। স্নাখালের হঠাৎ মনে পড়িল বাজার করিয়া শীঘ্র বাসায় ফেরা প্রয়োজন । সচকিতে উঠিয়া দাড়াইয়া বলিল, আজ আমি যাই সারদা । সাড়ে-বারোটায় আমাকে ট্রেন ধরতে হবে । সারদা আশ্চৰ্য্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, কোথায় যাবেন ? কাকাবাবুর বড় অমুখ । রেণু যাওয়ার জন্যে তার করেচে। সারা চিন্তিত-মূথে বলিল, নতুন-মাকে খবর দিয়েচেন ? না। নতুন-মা তো হরিণপুরে । তুমি তার চিঠিপত্র পাও নাকি ? স্থা। তিনি প্রতি চিঠিতেই কাকাবাবু ও রেণুর সংবাদ জানতে চান। আপনার কুশলও প্রতি পত্রেই জিজ্ঞেস করেন। রাখাল বলিল, তা হলে খবরটা তুমিই তাকে লিখে দাও । আমায় তিনি চিঠিপত্র দেননি । সারদ। বলিল, তা দেব। কিন্তু একটু অপেক্ষ করুন দেব তা । আমার ফিরিতে বেশি দেরি হবে না । সারা টিনের তোরঙ্গটি খুলিয়া কতকগুলি কাপড় বাহির করিয়া লইয়া ঘরের বাছিয়ে চলিয়া গেল। রাধালকে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করিতে হইল না। কয়েক মিনিটের মধ্যেই সারা মিলের ফর্স শাড়ি ও মোট সেমিজে পরিচ্ছন্ন বেশে একটি ক্ষুত্র পুটলি হাতে ঘরে ঢুকিল । বিস্থিত রাখাল সারদার মূখের পাৱে চাহিতে সারা কছিল, আমাকেও ষে আপনার সঙ্গে যেতে হবে দেবতা। »ፃፀ