পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/১৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఇe সারদাকে লইয়া রাখাল যখন ব্ৰজবাবুর শয্যাপার্থে গিয়া পৌছিল, রোগের প্রবল প্রকোপ তখন কতকটা সামলাইয়া উঠিলেও তিনি সম্পূর্ণ নিরাময় হ’ন নাই। এই অসুস্থতায় ব্রজবাবু দেহের সহিত মনেও নিরতিশয় দুৰ্ব্বল হইয়া পড়িয়াছিলেন। রাখালকে দেখিয়া তাহার নিমীলিত নেত্র বাহিয়া অশ্র গড়াইয়া পড়িতে লাগিল । স্বভাবত কোমলচিত্ত রাখাল তাহার পিতৃতুল্য প্রিয় কাকাবাবুর অসহায় অবস্থা দেখিয়া চোখের জল সংবরণ করিতে পারিল না। ব্ৰজবাবু মৃদুস্বরে ধীরে ধীরে বলিলেন, রাজু, তোমাকে আমি ডেকেচি— বাম্পাবরূদ্ধ কণ্ঠ পরিষ্কার করিয়া লইয়া কহিলেন, তোমার বোনটিকে দেখবার কেউ নেই বাবা। ওর জন্তেই তোমাকে ডাকা । রাখাল কথা কহিল না। ব্ৰজবাৰু অতিশয় ক্ষীণস্বরে বলিতে লাগিলেন, স্বাঞ্ছ, এখানে এরা আমাকে একঘরে করে রেখেচে । আমার গোবিন্যজী তার নিজের ঘরে ঢুকতে পাননি, তার নিজের বেদীতে উঠতে পাননি। রে আমার গোবিন্দজীর ভোগ রাধে বলে সকলেরই আপত্তি । আমার অবর্তমানে এখানে কেউ আমার রেণুর ভার নেবে না। ওকে তুমি নিয়ে গিয়ে ওর বিমাতার কাছেই পৌঁছে দিও। হেমন্ত রাগ করবে জানি, কিন্তু আশ্রয় দেবে নিশ্চয় । এ-ছাড়া আর তো কোনও উপায় খুজে পাচ্চিনে বাবা । রাখাল চুপ করিয়াই রহিল। পিতৃহীনা, কপর্দকশূন্য অনুঢ়া রেণুকে তাহার বিমাতা ও বিমাতার বিষয়-বুদ্ধিসম্পন্ন ভ্রাতা নিজের সংসারে গ্রহণ করিবেন কিনা সেইসম্বন্ধে সে যথেষ্ট সঙ্গিহান ছিল। তথাপি মুখে কিছুই বলিল না। ’ ব্ৰজবাবু বলিতে লাগিলেন, ওর বিয়েটা দিয়ে যেতে পারলে নিশ্চিন্ত মনে গোবিন্দর পায়ে ঠাই নিতে পারতাম। অস্তিম-সময়ে একাস্তচিত্তে গোবিন্দকে স্মরণ করতেও বাধা পাচ্ছি রাজু। রেণুর জন্য দুশ্চিন্তা আমাকে শাস্তিতে মরতে দিচ্চে না । রাখাল কহিল, এখন ও-সব কেন ভাবচেন কাকাবাবু ? আপনার এমন কিছুই হয়নি যার জন্তে রেণুকে এখনি হেমন্তমামার কাছে পাঠাবার ব্যবস্থা করতে হবে। আপনি মুস্থ হয়ে উঠুন, আমি নিজে এবার রেণুর বিয়ের জন্তে উঠে-পড়ে লাগচি। ব্ৰজবাৰু করুণ হাসিয়া কছিলেন, কিন্তু রেঞ্জ যে বিয়ে করবে না বলে রাহু । ֆՆՆ