পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/২০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় প্রসন্ন—অথচ এত বয়স পর্য্যন্ত সংসারে প্রবেশ করেননি, এর যথার্থ কারণটা জানতে পারি কি ? অবশ্য যদি বলতে আপনার বাধা না থাকে । বলতে কিছুমাত্র বাধা নেই। কারণটা নেহাৎ সোজা। প্রথমতঃ সময় ও সুযোগের অভাব, দ্বিতীয়তঃ বিবাহে অনিচ্ছা । প্রথমটা হয়তো একদিন সত্য ছিল, কিন্তু আজ তো আর তা নয় ? তখন ব্যবসায়ের উন্নতির চেষ্টায় দেশ-দেশাস্তর ঘুরে বেড়িয়েছিলেন, সংসার পাতার ভাবনা ভাববার অবকাশ ছিল না। কিন্তু তার পরে ? বললুম তো এইমাত্র, রুচি হয়নি। রুচি-অরুচির কথা উঠলে আর কোনও প্রশ্ন চলে না বিমলবাবু। তবু আমার আর একটি জিজ্ঞাসার জবাব দিন। এখন কি সংসারী হবার কোনও বাধা আছে আপনার ? ব্ৰজবাবুর প্রশ্নে বিমলবাবু বিস্ময়রোধ করিতেছিলেন যতখানি তারও বেশি করিতেছিলেন কৌতুকবোধ। চাপা হাসিতে তাহার চোখ-মুখ উজ্জল হইয়। উঠিয়াছিল । বলিলেন, বাধা কোনদিনই ছিল না ব্ৰজবাবু, আজও নেই। হয়তো বা আমার বিবাহের পথ এত বেণী অবাধ বলেই স্বয়ং প্রজাপতি পথ আগলে বসে রইলেন ; নববধূর আর শুভাগমন হ’লে না। ব্ৰজবাবু বলিলেন, আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারলাম না। দেখুন, অামাদের দেশে একটা মেয়েলী প্রবাদ হয়তো শুনেচেন, অতিবড় ঘরণী না পায় ঘর । অতিবড় সুন্দরী না পায় বর ॥ আমারও হয়েচে তাই । বিবাহের পাত্র হিসাবে নাকি আমি সকলদিক দিয়েই উপযুক্ত, এ-কথ। অনেকেই বলেচেন, অন্ততঃ ঘটক সম্প্রদায় তো বলেনই। তবুও যার সারা-যৌবনে বিয়ের ফুল ফুটলো না, সে-স্থলে প্রজাপতির বাধা ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে বলুন ? কিন্তু এতদিন ফোটেনি বলেই ষে কোনদিনই ফুটবে না, এও তো নয় । সময় উত্তীর্ণ হয়ে গেছে দাদা। অকালে কি আর ফুল ফোটে ? জোর করলে তার বিকৃতি ঘটানো হয় মাত্র। বিবাহ ব্যাপারটা অনেকটা মরশুমী ফুলের মতো, ঠিক নিজের ঋতুতে আপনি ফোটে। মরশুম চলে গেলে আর ফোটে না, তখন সে দুর্লভ। ব্ৰজবাৰু একটু চিন্তা করিয়াহালি-যুখে বলিলেন, ভাল মালী চেষ্টা করলে অসময়েও ফুল ফোটাতে পারে ; কিন্তু সে-কথা থাক, বিবাহটা যে ঠিক মরশুমী ফুল, আমি মানতে পারলাম না। বিয়ের ফুল ফোটা বলে একটা কথা এদেশে আছে, কিন্তু কোনও দেশেই ওটা যে ফুলের চাষের নিয়ম মেনে চলে এমন প্রমাণ বোধ হয় নেই। বিমলবাবু বলিলেন, ন না, তা নয়। জামি বলতে চাইচি, জীবনে বিবাহের ৯ষ্ট্ৰঞ্চ