পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/২১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ আতিমাত্রায় বিপর হইয়া বিমলবাবু বলিলেন, আপনি কি বলচেন ? আমি আপনার ছোট ভাইয়ের মতো। যে-আদেশ যখনি করবেন পালন করবে। এমন অনুচিত কথা উচ্চারণ করে আমাকে অপরাধী করবেন না । না না, কথাটা শুনলে আপনি বুঝতে পারবেন এ আমার অনুরোধ নয়, একাত্ত প্রার্থনাই । বলুন আমার মিনতি রাখবেন ? সাধ্যের মধ্যে হলে নিশ্চয়ই রাখবো। বিমলবাবু কথাটা বিশেষ উৎকঠিত হইয়াই বলিলেন । - অশ্রুপূর্ণলোচনে ব্রজবাবু বলিলেন, গোবিন্স আপনার মঙ্গল করবেন। আমার জন্ম-দুঃখিনী মেয়েটার ভার আপনি নিন বিমলবাবু। ওকে আপনার হাতে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্তু হতে চাই । বিমলবাবু স্তম্ভিত হইয়া গেলেন । তিনি স্বপ্নেও কল্পনা করেন নাই, ব্রজবিহারীবাবু তাহাকে বিবাহের পাত্ররূপে নিজ কন্যার জন্য নিৰ্ব্বাচন করিতে পারেন। ক্ষণকাল নিৰ্ব্বাক থাকিয়া বলিলেন, আপনি আগে একটু মুস্থ হয়ে উঠুন ব্ৰজবাব, ও সব আলোচনা পরে হবে । ব্ৰজবাবু সকাতরে বলিতে লাগিলেন, আপনি উদার প্রকৃতির, মন আপনার উন্নত । অন্য কার কাছেই আমি ভরসা করে এ প্রস্তাব করতে পারতাম না। আমার জীবনের দুঃখ-দুর্দশার কাহিনী আপনি সমস্তই জানেন । দেবতার নিৰ্ম্মাল্যের মতোই মেয়ে আমার নিষ্পাপ। তার গুণের সীমা নেই, রূপও নিতাস্ত অবজ্ঞার নয়। অথচ এমন মেয়েরও ভাগ্যে বিধাতা এত দুঃখ লিখেছিলেন । আপনি হয়তো জানেন না, রেণুর বিবাহ হওয়াই এখন দুর্ঘট। আমার না আছে আজ অর্থবল, না আছে লোকবল, না আছে কুলের গৌরব। ওর বিবাহের আশা-ভরসাই নেই। অতিশয় আশায় আগ্রহাম্বিত হইয়া ব্রজবিহারীবাবু এতক্ষণ কথা কহিতেছিলেন, কিন্তু বিমলবাবু নতমুখে নিরুত্তরে বসিয়া আছেন দেখিয়া অকস্মাং তিনি ভগ্নোৎসাহে চক্ষু মুদিয়া আরাম-কেনারায় এলাইয়া পড়িলেন । অল্পক্ষণ পরে যুক্তকর ললাটে ঠেকাইয়া নিরুপায়ের মতো বলিলেন, গোবিন্দ তোমারই ইচ্ছা পূর্ণ হোক! সারদা বারঙ্গায় লণ্ঠন লইয়া আসিল । বিমলবাবু জিজ্ঞাসা করিলেন, মা, রাজু কি বাড়ি আছে ? সারদা বলিল, না, একটু আগে ডাক্তারখানায় গিয়েচেন । এখুনি ফিরবেন। ব্ৰজবাবুর দিকে চাহিয়া বলিল, কাকাবাবু, আপনার কমলালেবুর রস আনবো কি ? ব্ৰজবাবু ইশারায় হাত নাড়িয়া মানা করিলেন। বিমলবাবু বলিলেন, না কেন দাদা, আপনার কমলার রস খাওয়ার সময় হয়েচে ষে নিয়ে আসবে বৈকি। আনো সারা-মা । १० ९