পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/২১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় করিয়াছি। আপনাকে সংবাদ দিবার প্রবৃত্তি ছিল না, কিন্তু লোকত ও ধৰ্ম্মঞ্জ ইত্যাদি।” এ-সব অংশ ওঁকে শোনাবার দরকার নেই। * রাখাল কহিল, রাণীর বিবাহ স্থির হয়ে গেল তার পিতার ইচ্ছা-অনিচ্ছা সন্মতি ও অসন্মতির অপেক্ষ না করেই। আশ্চৰ্য্য ! সংসারে এমন দেখেচেন কি বিমলবাবু ? বিমলবাবু একটু হাসিলেন মাত্র। রাখাল আবার পড়িতে লাগিল—“অদ্য নির্বিঘ্নে গুম্ভ-গাত্র হরিদ্র সম্পন্ন হইয়া গিয়াছে। আগামী কল্য গোধূলি-লগ্নে শুভবিবাহ ।” ব্যাস্, এইটুকুমাত্র লিখেচে । কোথায় বিবাহ হচ্চে, পাত্র কেমন, কোন সংবাদই দেয়নি। আক্কেল-বিবেচনা দেখলেন ? বিমলবাবু চুপ করিয়া রছিলেন। রাখাল বলিল, বড় মেয়ে অবিবাহিতা রইলো, অথচ ছোট মেয়ের ঘটা করে বিয়ে। বিমলবাবু শাস্ত কণ্ঠে কহিলেন, সংসারে এই-ই নিয়ম রাজু। কোনো কিছুই কারে জন্য অপেক্ষা করে থাকে না । কাকাবাবু ওদের সর্বস্ব দিয়ে আজ কপর্দক-শূন্য বলেই এতট বেশী বাড়াবাড়ি সম্ভব হ’লো, নইলে হতে পারতে না । উদাস কণ্ঠে বিমলবাবু বলিলেন, এটাও হয়তো সংসারেরই সহজ নিয়ম । পত্ৰধানি পাওয়া অবধি রাখালের অন্তরের মধ্যে জালা করিতেছিল । তিক্তকণ্ঠে কহিল, সংসারের নিয়ম বলে সব কিছুই সহ করা যায় না বিমলবাবু ! . বিমলবাবু হাসিয়া বলিলেন, কিন্তু সহ না করেও তো উপায় নেই রাজু | ミミ শীতের সন্ধা । কলিকাতার সরু গলির মধ্যে একখানি একতলা বাড়ির দ্বয়ারভেজানো ঘরে রেণু হারিকেন-লষ্ঠনের সামনে বসিয়া পশমের ছোট টুপি বৃনিতেছিল। জুয়ারের বাহির হইতে সারদার অমুচ-কণ্ঠ শোনা গেল,—দিদি— রেণু সাড়া দিল,—এসোসারদা দরজা ঠেলিয়া ঘরে প্রবেশ করিল। তাহার পিছনে প্রকাও ধাম লইয়। দাসী । রেণু তাহাকে দেখিয়া সারদার দিকে চাহিতেই সারা বলিল, গোবিন্দজীর জন্য মা কিছু ফল-মূল তরিতরকারি অার ভাল মাখন পাঠিয়েছেন। রেণুর চোখের দৃষ্টি প্রধর হইয়া উঠিল। অল্পক্ষণ স্তন্ধ থাকিয়া ধীর-কণ্ঠে কছিল, সারদাদিদি, ও তো আমরা নিতে পারবো না। १०१