পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/২২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় সম্বর মুখ চোখ মুছিয়া ক্ষিপ্ৰহন্তে গায়ে মাথায় বসন স্বসংষত করিয়া সবিতা ৰাৱ খুলিলেন। তারকের এই অধীর ব্যস্ততায় তিনি বাড়িতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটিয়াছে অনুমান করিয়া শঙ্কিত হইয়া উঠিয়াছিলেন। দরজা খুলিয়া বাহির হইবামাত্র তারক বলিল, আপনি নাকি রোজই রাত্রে অনাহারে কাটাচ্ছেন শুনলাম। আজও কিছুই মুখে দেননি। শরীর কি খারাপ হয়েচে ? তারকের প্রশ্ন শুনিয়া সবিতা বিস্ময়ে ও বিরক্তিতে স্তব্ধ হইয়া গেলেন, কোনও উত্তর দিলেন না । তারক পুনরায় প্রশ্ন করিল। না, আমি ভালোই আছি—সবিতা শান্ত গলায় জবাব দিলেন। তবে কেন রোজ এমন করে উপোস করে থাকেন ? না না, সে আমি শুনবে না। কিছু-লা-কিছু খাওয়া দরকার। কালই আমি ডাক্তার নিয়ে আসবো । তারকের কণ্ঠে যথেষ্ট উদ্বিগ্নতা প্রকাশ পাইল । ও-সব হাঙ্গামা ক’রো না তারক । আমি নিষেধ করচি । তা হলে বলুন, কেন অকারণে উপোস দিয়ে শরীরের উপর এমন অত্যাচার করচেন ? রাত হয়েচে, শোও গে তারক। সবিতার কণ্ঠে নিরতিশয় ক্লাস্তি ফুটিয়া উঠিল । তারক ইহাতে ক্ষুণ্ণ হইয়া পড়িল। বলিল, বেশ, আপনার যা খুশি করুন, আমি সিঙ্গাপুরে সমস্ত ব্যাপার লিখে জানাই। তিনি এসে শেষে যদি বলেন, তারক, তোমাকে দেখাশুনার দায়িত্ব দিয়ে রেখে গিয়েছিলাম, আমাকে জানাওনি কেন— তখন কি জবাব দেবো তাকে ? সবিতার অস্তুর জলিয়া উঠিল। কিন্তু ধীরভাবেই বলিলেন, আমি কেন দু'দিন খাইনি কিংবা তিনদিন ঘুমোইনি এর জন্তু কারো কাছেই তিনি কৈফিয়ৎ চাইবেন না। তা হলে এখানে আমার থাকার কি দরকার নতুন-মা ? তারকের স্বরে অভিমান প্রকাশ পাইল । সবিত অবসর-কণ্ঠে বলিলেন, আজ আমি বড় ক্লান্ড তারক। তর্ক করবার শক্তি নেই। শুতে চললাম । সবিতা আস্তে আস্তে আবার দরজা বন্ধ করিয়া দিলেন। সারদা দিড়ির মুখেই দাড়াইয়াছিল! তারক ফিরবার পথে তাহাকে দেখিতে পাইয়া তীব্ৰকণ্ঠে বলিয়া উঠিল, নতুন-মা যে প্রতিদিন রাতে উপোসী থাকচেন, একথা আমাকে কেন জানাননি । আজ শিবুর মার মুখে জানতে পারলাম। আপনি তো তার সম্বন্ধে কিছু জানতে চাননি । ३४ {